লখনউ: পশ্চিমবঙ্গের বেলডাঙায় স্থগিতপ্রাপ্ত তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের ‘বাবরি মসজিদ’ (Yasoob Abbas on Beldanga Babri)নির্মাণের শিলান্যাস ঘিরে বিতর্ক দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। এবার সরাসরি ক্ষোভ উগরে দিলেন অল ইন্ডিয়া শিয়া পার্সোনাল ল বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ইয়াসুব আব্বাস। তাঁর অভিযোগ, “এ ধরনের ঘোষণা দেশকে ভাঙার চক্রান্ত। এর পিছনে পরিষ্কার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে।”
৬ ডিসেম্বর, অর্থাৎ অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিনেই বেলডাঙায় ‘বাবরি মসজিদ’ এর শিলান্যাস করতে চাইছেন হুমায়ুন। এই তারিখের নির্বাচনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনীতির গন্ধ মিলছে বলে মনে করেন আব্বাস। তিনি বলেন, “মন্দির-মসজিদ নিয়ে দেশে বছরের পর বছর অশান্তি, দাঙ্গা, সংঘাত হয়েছে। মানুষ শান্তি খুঁজতে মসজিদে যান বাবরের নামে মসজিদ বানিয়ে সেই শান্তিকেই অপমান করা হচ্ছে।”
বাবরি বিতর্কে হুমায়ুনের সমালোচনায় মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের ইমাম
“মসজিদের নাম আল্লাহ বা নবীর নামে হওয়া উচিত, লুটেরা বাবরের নামে নয়” কড়া মন্তব্য আব্বাসের। মাওলানা ইয়াসুব আব্বাস স্পষ্ট ভাষায় জানান, “মসজিদের নাম হওয়া উচিত আল্লাহ বা তাঁর রসূলদের নামে। কোনও রাজা, সেনাপতি, বা এমন ঐতিহাসিক চরিত্র, যাঁর বিরুদ্ধে দেশের লুটপাট বা অত্যাচারের অভিযোগ রয়েছে তাদের নামে মসজিদ হওয়া উচিত নয়।
বাবরের নামে মসজিদ গ্রহণযোগ্য নয় কোনও মুসলিমের কাছে।” তিনি আরও বলেন, “হুমায়ুন কবীর সস্তা প্রচারের জন্য বাবরের নাম বেছে নিয়েছেন। এটি রাজনৈতিক নাটক ছাড়া কিছু নয়। দেশের মুসলমানদের ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়ে তিনি নিজের জনপ্রিয়তা বাড়াতে চাইছেন। কিন্তু মুসলিম সমাজ এমন নাম বরদাস্ত করবে না।”
হুমায়ুন কবীরের এই ঘোষণায় মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় ইতিমধ্যেই উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাঁর সমর্থকরা বিভিন্ন এলাকা থেকে ইট, নির্মাণসামগ্রী নিয়ে শিলান্যাস স্থলে জড়ো হচ্ছেন। কিছু সংগঠন অনুষ্ঠান স্থগিতের আবেদন জানায়, কিন্তু শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট শিলান্যাস অনুষ্ঠানে স্থগিতাদেশ জারি করেনি।
ফলে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে পূর্ণোদ্যমে। অন্যদিকে জেলা প্রশাসন বড় জমায়েত ঠেকাতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছে। বিদেশি ইসলামি বক্তাদের উপস্থিতির গুজব, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার আশঙ্কা—সব মিলিয়ে বেলডাঙা এখন নজরকাড়া নিরাপত্তার আওতায়।
হুমায়ুন কবীরকে আগেই দল থেকে সাসপেন্ড করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বক্তব্য ও আচরণে ক্ষুব্ধ ছিলেন। এবার বাবরি ইস্যুকে সামনে এনে তিনি যখন নতুন রাজনীতি করছেন, তৃণমূল দাবি করছে “এই কর্মসূচির সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই।” বিজেপি সরাসরি অভিযোগ করেছে যে হুমায়ুন সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংক ধরে রাখতে বিভাজনমূলক রাজনীতি করছেন। বাম ও কংগ্রেসও একই সুরে বলছে সংবেদনশীল বিষয়কে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগত প্রচার চালানোর এই প্রবণতা বিপজ্জনক।
মাওলানা ইয়াসুব আব্বাস বলেন, “মন্দির-মসজিদ নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশে অশান্তির ইতিহাস রয়েছে। মানুষ উপাসনার স্থানে যান মানসিক শান্তির জন্য, রাজনৈতিক স্লোগান তোলার জন্য নয়। তাই ধর্মকে রাজনৈতিক মঞ্চে টেনে আনা অত্যন্ত ভুল এবং সমাজের পক্ষে ধ্বংসাত্মক।” তিনি আরও যোগ করেন, “হুমায়ুন কবীরের এই উদ্যোগ কোনওভাবেই মুসলিম সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে না। বরং এটি বিভাজন বাড়ানোর উদ্দেশ্যে করা এক পরিকল্পিত পদক্ষেপ।”
বাবরি ইস্যুকে সামনে এনে বেলডাঙায় ‘বাবরি মসজিদ’ শিলান্যাসের প্রচেষ্টা নিয়ে দেশজুড়ে নতুন উত্তাপ তৈরি হয়েছে। মাওলানা ইয়াসুব আব্বাসের কড়া মন্তব্য সেই উত্তাপকে আরও তীব্র করেছে। ধর্মীয় ইস্যুতে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা যে সমাজে অশান্তি ডেকে আনতে পারে, সেই সতর্কবার্তাই বারবার উঠে আসছে মুসলিম নেতৃবৃন্দের মুখে। বেলডাঙায় ৬ ডিসেম্বর কীভাবে পরিস্থিতি সামলাবে প্রশাসন—এখন সেদিকেই নজর রাজ্য-রাজনীতির।


