বঙ্গে Pre-SIR-এ সাত জেলায় বাদ ৫০ শতাংশ নাম

Stepwise Instructions to Fill the SIR Enumeration Form Correctly

কলকাতা: বাংলার রাজনীতিতে নতুন চাঞ্চল্য! ভোটার তালিকার Pre-SIR যাচাইয়ে উঠে এসেছে এক বিস্ফোরক তথ্য।রাজ্যের সাতটি জেলায় প্রায় ৫০ শতাংশ নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকা থেকে উধাও। নির্বাচন কমিশনের তরফে শুরু হয়েছে “matching–mapping” বা মিলিয়ে দেখা প্রক্রিয়া, যাতে নির্দিষ্টভাবে জানা যাবে কোন নামগুলি প্রকৃত, আর কোনগুলি সন্দেহভাজন বা জালিয়াতির ফলে যুক্ত হয়েছিল।

Advertisements

এই উদ্যোগকে কেন্দ্র করে রাজ্যজুড়ে নতুন বিতর্কের সূচনা হয়েছে। বিশেষ করে ‘ইনফিলট্রেশন’ বা অবৈধ অনুপ্রবেশ ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলি ইতিমধ্যেই মুখোমুখি অবস্থানে। একদিকে বিজেপি দাবি করছে, “বাংলার ভোটার তালিকা বহু বছর ধরে অনুপ্রবেশকারীদের দ্বারা বিকৃত হয়েছে”, অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস বলছে, “এটি বিজেপির জনসংখ্যা রাজনীতি খেলার কৌশল।”

   

তৃণমূলের আইপ্যাকে ঢালাও চাকরি বাম-বিজেপি নেতাদের!

নির্বাচন কমিশনের এক সিনিয়র আধিকারিক জানিয়েছেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, মালদা, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর এবং কোচবিহার এই সাত জেলায় চালানো হয়েছে প্রাথমিক Pre-SIR যাচাই। চমকে যাওয়ার মতো তথ্য উঠে এসেছে প্রায় অর্ধেক নাম ২০০২ সালের তালিকার সঙ্গে মিলছে না। অর্থাৎ, বহু নাম “বেআইনি বা নতুন সংযোজন” হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

“Matching-mapping exercise এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। যারা বাদ পড়েছেন, তাঁদের নথিপত্র পরীক্ষা করে দেখা হবে ভোটার হিসেবে তাঁদের নাম থাকা বৈধ কি না।” রাজনৈতিক মহলে এখন প্রশ্ন এটা কি কেবল নির্বাচন কমিশনের পরিস্কার অভিযান, নাকি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উদ্যোগ?

Advertisements

নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, এটি সম্পূর্ণ প্রশাসনিক উদ্যোগ। লক্ষ্য একটাই—ভোটার তালিকা থেকে ভুল বা নকল নাম মুছে ফেলা। ভোটারদের মধ্যে যাঁদের নাম বাদ পড়েছে, তাঁদের নোটিশ পাঠানো হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বৈধ পরিচয়পত্র জমা দিতে বলা হবে।
কমিশন সূত্রে খবর, যদি কেউ বৈধ নাগরিকত্ব বা নথিপত্র দেখাতে না পারেন, তাঁদের নাম ভোটার তালিকা থেকে স্থায়ীভাবে বাদ দেওয়া হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্ত ঘেঁষা জেলাগুলিতে এই হারের উচ্চতা স্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে উত্তর ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ ও মালদা—এই তিন জেলায় নাম উধাও হওয়ার হার গড়ের চেয়ে অনেক বেশি। “এটা স্পষ্ট যে, বিগত দুই দশকে ভোটার তালিকা নিয়ে বড় ধরনের কারচুপি হয়েছে। এখন প্রশাসনিকভাবে সেই ময়লা পরিষ্কার করা শুরু হয়েছে।”

কমিশনের পরবর্তী ধাপ হবে নথি যাচাই। প্রতিটি জেলায় বিশেষ টিম গঠন করা হচ্ছে, যারা স্থানীয় প্রশাসন ও ভোটার অফিসের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে। লক্ষ্য আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে একদম পরিস্কার ভোটার তালিকা তৈরি করা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে বড় রাজনৈতিক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে ‘ইনফিলট্রেশন ম্যানিপুলেশন ওভার’—এই বার্তা যদি জনগণের মধ্যে পৌঁছায়, তা বিজেপির জন্য বড় রাজনৈতিক অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে।

বাংলার ভোটার তালিকায় অর্ধেক নাম উধাও এই তথ্য শুধু প্রশাসনিক নয়, রাজনৈতিক দিক থেকেও এক বিস্ফোরক সংকেত। একদিকে নাগরিকত্ব, অনুপ্রবেশ ও ভোটাধিকারের প্রশ্ন; অন্যদিকে রাজনৈতিক দলের দায় ও কৌশল। নির্বাচন কমিশনের এই “ক্লিনআপ মুভ” কি সত্যিই স্বচ্ছ ভোটার তালিকার দিকে এক বড় পদক্ষেপ, নাকি নতুন রাজনীতির সূচনা? সময়ই বলবে।