কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধনের মেগা অভিযানে বিপুল সংখ্যক ‘সন্দেহজনক’ নাম প্রকাশ্যে এল। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের চালানো স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (SIR ) প্রক্রিয়ায় প্রায় ১৪ লক্ষ ফর্মকে ‘আনকালেক্টেবল’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অনুপস্থিত ভোটার, ডুপ্লিকেট নাম, মৃত ব্যক্তি এবং যাঁরা অন্যত্র চলে গিয়েছেন, তাঁদের নাম। এই বিশাল সংখ্যক ফর্ম বাতিলের সম্ভাবনা রাজ্য রাজনীতিতে নতুন ঝড় তুলেছে।
রাজ্য জুড়ে এখন ৮০ হাজার ৬০০-র বেশি বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) মাঠে নেমেছেন। দরজায় দরজায় গিয়ে তাঁরা যাচাই করছেন ফর্ম-১২ডি-তে দেওয়া তথ্য। যে সব ভোটার বাড়িতে পাওয়া যাচ্ছে না, যাঁদের পরিবার বলছে ‘অনেক আগেই চলে গিয়েছেন’ কিংবা যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের নাম কেটে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, এই ১৪ লক্ষের মধ্যে প্রায় ৮-৯ লক্ষ নামই চূড়ান্তভাবে বাদ পড়তে পারে।এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল গত জুলাই মাস থেকে।
১৯ বীরের কাহিনি: কীভাবে উরি হাইড্রো প্ল্যান্টে পাকিস্তানের হামলা রুখল CISF
প্রথমে ১ আগস্ট থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডোর-টু-ডোর ভেরিফিকেশন হয়েছে। তারপর অক্টোবর-নভেম্বরে দ্বিতীয় দফা। এখন চলছে তৃতীয় তথা শেষ দফা। ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন। তার আগে এই ‘ক্লিনিং’ অপারেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা যত পরিচ্ছন্ন হবে, বিতর্ক তত কমবে।সবচেয়ে বেশি ‘আনকালেক্টেবল’ ফর্ম ধরা পড়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, পূর্ব বর্ধমানের মতো জেলাগুলিতে।
শহর কলকাতাতেও লক্ষাধিক ফর্ম এই তালিকায়। বিশেষ করে শরণার্থী কলোনি, বস্তি এলাকা, পুরনো বাড়ি যেখানে মানুষ বদল হয়েছে বারবার, সেখান থেকেই সবচেয়ে বেশি নাম বাদ পড়ছে।রাজনৈতিক মহলেও এ নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, এটা কমিশনের ‘সাফাই অভিযান’ নয়, বিরোধীদের ভোট কাটার চক্রান্ত।
অন্যদিকে বিজেপি বলছে, দীর্ঘদিনের ভুয়ো ভোটারদের তালিকা পরিষ্কার হচ্ছে, এতে আপত্তি কীসের? সিপিএম-কংগ্রেসও বলছে, সত্যি সত্যি ভুয়ো ভোটার থাকলে বাদ দেওয়া উচিত, কিন্তু যাঁরা আসল ভোটার তাঁদের নাম যেন না কাটা হয়।নির্বাচন কমিশন অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছে, কোনও নির্দিষ্ট দলকে টার্গেট করা হচ্ছে না। যাঁরা সত্যি সত্যি বাড়িতে নেই, মৃত অথবা একাধিকবার নাম উঠিয়েছেন, শুধু তাঁদের নামই কাটা হবে।
ভোটারদের জন্য রয়েছে আপিলের সুযোগও। যাঁরা মনে করছেন তাঁদের নাম ভুল করে কাটা হয়েছে, তাঁরা বিএলও-র কাছে বা অনলাইনে দাবি-আপত্তি জানাতে পারবেন।এই বিশাল অভিযানের পিছনে রয়েছে নির্বাচন কমিশনের ‘নো ভোটার টু বি লেফট বিহাইন্ড’ নীতির সঙ্গে ‘ভোটার লিস্টে শুদ্ধি’র দ্বৈত লক্ষ্য। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা নিয়ে বিতর্ক যে পরিমাণ হয়েছিল, তার পর কমিশন আর ঝুঁকি নিতে চায় না।
তাই এবার এত বড় মাপের ডোর-টু-ডোর যাচাই।আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আরও অনেক নাম বাদ পড়তে পারে। আবার অনেকে নতুন করে নাম তুলতেও পারেন। কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার, ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা একেবারে নতুন রূপে দেখা যাবে। এই ‘মহাযজ্ঞে’ কার লাভ, কার ক্ষতি, তা সময় বলবে। তবে ভোটের ময়দান এখন থেকেই গরম হয়ে উঠেছে তা নিশ্চিত।
