Sunday, December 7, 2025
HomeWest BengalNorth Bengalবঙ্গে মৃত ভোটার তালিকাতেই চোখ কপালে কমিশনের

বঙ্গে মৃত ভোটার তালিকাতেই চোখ কপালে কমিশনের

- Advertisement -

কলকাতা, ৭ ডিসেম্বর: পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) প্রক্রিয়ায় সামনে এলো অভূতপূর্ব তথ্য (West Bengal SIR ghost voters)। প্রথম দফার সমীক্ষাতেই ৫৪.৬ লাখ ভোটারকে “মৃত, ডুপ্লিকেট বা অচিহ্নিত” হিসেবে শনাক্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। ১৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত হতে চলা ড্রাফ্ট রোলে এই বিপুল সংখ্যক ভোটারের নাম বাদ পড়তে পারে যা ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে।

এই বিপুল সংখ্যক ভুয়ো বা অচল ভোটারের অস্তিত্ব কার্যত ভেঙে দিল বহুদিনের রাজনৈতিক বিবৃতি ও পাল্টা-বিবৃতির ভিত্তি। বিরোধী দলগুলোর বিদেশ করে তৃণমূলের দাবি ছিল SIR প্রক্রিয়া রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন বরাবরই বলে আসছিল “ভোটার তালিকা শুদ্ধ করাই উদ্দেশ্য, রাজনীতি নয়।” কিন্তু এই পরিসংখ্যান সামনে আসতেই স্বাভাবিকভাবেই নতুন করে প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে এতদিন তাহলে এই ৫০ লক্ষাধিক ভূতের মতো ভোটার কোথায় ছিল? বা কে তাদের নাম তালিকায় রেখেছিল?

   

POK তে গোয়েন্দাদের রাডারে লস্করের নয়া মসজিদ

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই লক্ষাধিক মৃত ভোটার তালিকা বাংলার ভোট রাজনীতির একটা “দীর্ঘদিনের অন্ধকার অধ্যায়কে” খোলসা করে দিয়েছে। শহর থেকে গ্রাম প্রায় প্রতিটি জেলারই SIR টিম অভিযোগ পেয়েছে ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে কাউকে না পাওয়া, বা সেই নামের ব্যক্তি বহু বছর আগে মারা গেছেন, অথবা একই নাম তিন-চারটি ওয়ার্ডে পাওয়া যাচ্ছে। এদেরই বৃহৎ অংশকে “ডেড, ডুপ্লিকেট, আনট্রেসেবল” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে এত বিপুল সংখ্যক ভোটার একসঙ্গে বাদ পড়া বিরল। দেশের অন্য কোনও রাজ্যে এত উচ্চ শতাংশে মৃত বা ডুপ্লিকেট ভোটার চিহ্নিত হয়নি। কমিশনের এক আধিকারিকের কথায়, “এটি উদ্বেগজনকও, আবার ইতিবাচকও। উদ্বেগজনক কারণ এতে বোঝা যাচ্ছে কত বছর ধরে তালিকা শুদ্ধ হয়নি। ইতিবাচক কারণ এবার অন্তত প্রকৃত ভোটারদের পরিচয় স্পষ্ট হবে।”

তবে এখানেই শেষ নয় আরও ২৮ থেকে ৩০ লাখ ভোটারকে ১৬ ডিসেম্বর থেকে ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শুনানির মুখোমুখি হতে হবে। তাদের ঠিকানা, পরিচয়, নথি সবকিছু যাচাই করে তবেই সিদ্ধান্ত হবে তাদের নাম থাকবে নাকি বাদ যাবে। অর্থাৎ, দ্বিতীয় দফার শুদ্ধিকরণ আরও বড় পরিসরের।

এই শুনানি পর্যায় নিয়েও রাজনৈতিক চাপানউতোর তুঙ্গে। শাসক দল বলছে এটি “ভোট কাটছাঁটের অজুহাত”, অন্যদিকে বিরোধীরা বলছে “এখনই প্রকাশ পাচ্ছে আসল সত্য।” তবে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন। অনেকেই বলছেন ভোটার তালিকা ঠিক হলে অন্তত তাদের ভোটের মূল্য বাড়বে।

১৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। ফলে আগামী দু’মাসই বাংলায় সবচেয়ে কঠোর ভোটার যাচাই পর্যায় চলবে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে এই পুরো প্রক্রিয়া শেষ হলে বাংলার ভোটার তালিকা বহু বছরের “সবচেয়ে পরিষ্কার ও সঠিক” হয়ে উঠবে।

এই মুহূর্তে রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে তৃণমূলের বিবৃতিতে। এতদিন তারা দাবি করছিল SIR “ভুয়ো ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।” কিন্তু কমিশনের হাতে ধরা পড়া ৫৪.৬ লাখ সন্দেহজনক ভোটারের সংখ্যা তাদের যুক্তিকে দুর্বল করেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে “ঘোস্ট ভোটার সাম্রাজ্য” বহুদিনের অভিযোগ, এবার ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। এতে আগামী নির্বাচনগুলোর ভোটের গাণিতিক চিত্র, বুথ-ভিত্তিক ফলাফল, এমনকি জেতা-হারার বহু বছরের অভ্যাস সবই নতুন করে বদলে যেতে পারে।বাংলার গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ যে নতুন মোড়ের মুখে দাঁড়িয়ে এ নিয়ে আর সন্দেহ নেই।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular