কলকাতা, ১৯ নভেম্বর: ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন (West Bengal SIR) ঘিরে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক সংঘাত প্রতিদিন নতুন মাত্রা পাচ্ছে। মাল, জলপাইগুড়িতে বুথ লেভেল অফিসার (BLO) শান্তি মুনি এক্কার মৃত্যুর পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় আজ সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি পোস্ট করেছিলেন। তাতে তিনি বলেন BLOদের উপর অত্যধিক চাপ দেওয়ার কারণেই তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন এবং তাদের মৃত্যু হচ্ছে। বিজেপি নেতা অমিত মালব্য তার এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করে মমতার অভিযোগকে নস্যাৎ করে দিয়ে তাকে ‘বিষাক্ত মিথ্যেবাদী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ছুটিতেই নতুন যাত্রা শুরু করলেন এই বাগান ফুটবলার, ভাইরাল ছবি
মালব্য দাবি করেছেন, অন্যান্য রাজ্যে SIR প্রক্রিয়া একইভাবে চললেও পশ্চিমবঙ্গেই যেন অস্বাভাবিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। NDA-শাসিত বিহারের উদাহরণ তুলে যিনি বলেছেন “বিহারে একই সময়ে একই SIR প্রক্রিয়া হয়েছে, সেখানে কোনও আত্মহত্যা বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। তাহলে কেন শুধু বাংলাতেই BLO-দের মৃত্যু হচ্ছে?” অমিত মালব্য আরও বিস্ফোরক অভিযোগ এনে বলেছেন, রাজ্যের সরকারি ও আধা-সরকারি কর্মীদের ওপর তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ দুষ্কৃতীদের চাপই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
অভিযোগ, শিক্ষক, আঙ্গনওয়াড়ি ও ASHA কর্মীদের বলা হচ্ছে “দ্রুত তালিকা তৈরি না হলে চাকরি যাবে, বদলি হতে হবে, অথবা শারীরিকভাবে হামলার মুখে পড়তে হবে।” এছাড়াও তিনি বলেন, তৃণমূলের একাধিক নেতার প্রকাশ্য মন্তব্য রাজ্যের প্রশাসনিক কর্মীদের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে। এর আগেও অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের ‘BLO-দের গাছে বেঁধে রাখা হবে’ মন্তব্য ঘিরে ইতিমধ্যেই তীব্র বিতর্ক ছড়িয়েছে। মালব্য প্রশ্ন করেছেন এই পরিবেশ তৈরির পরই কেন রাজ্যে BLO-দের মৃত্যু নিয়ে খবর আসতে শুরু করল?
অন্যদিকে বিরোধীদের অভিযোগ ২০২১ সালের পর থেকে রাজ্যে রাজনৈতিক খুন, ভয় দেখানো, সরকারি কর্মীদের ওপর হামলা বা চাপে ফেলার ঘটনা বেড়েছে। বিশেষ করে ভোটকে কেন্দ্র করে ‘ভোটার ফাঁকি’ প্রতিরোধের নাম করে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীগুলির ওপর নানা অভিযোগ উঠছে। বিরোধীরা দাবি করছে, ভোটার তালিকা পুনর্বিবেচনায় ‘অবৈধ ভোটার, ভুয়ো পরিচয়, অনুপ্রবেশকারীদের’ নাম মুছে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় শাসকদলের দুশ্চিন্তা বেড়েছে।
তবে তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ আলাদা। শাসকদলের বক্তব্য “বিরোধী দলগুলি বিকৃত তথ্য ছড়িয়ে রাজ্যে অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছে। যেকোনও প্রশাসনিক মৃত্যুর তদন্ত আইনি পথেই হবে। কিন্তু এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।” শান্তি মুনি এক্কার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এখনও তদন্ত চলছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ, কাজের চাপ বা কোনও তৃতীয় পক্ষের জড়িত থাকার বিষয়—সবই যথাযথভাবে খতিয়ে দেখা হবে। তবে ঘটনাটি সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গেই রাজনৈতিক তরজা তীব্রতর হওয়ায় রাজ্যের সাধারণ কর্মী-সংগঠক ও BLO-দের মানসিক নিরাপত্তা নিয়ে নতুন প্রশ্নও উঠছে।


