কলকাতা: দীর্ঘ ১৫ বছরের তৃণমূল জমানা। এর মধ্যে বাংলায় হয়নি উল্লেখযোগ্য শিল্প। অর্থনীতি তলানিতে, পুরোটাই ঋণের উপরে। শিল্প যে শুধুই অধরা তাই নয়। বন্ধ হয়ে গেছে স্থায়ী শিল্পও। এই প্রসঙ্গেই সরব হয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। তিনি স্পষ্ট ভাষায় তার এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন এই ১৫ বছরের জমানায় বাংলার শিল্পকে গলা টিপে খুন করা হয়েছে।
রাজ্যে ২০২৫–এর রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে। এর মধ্যেই বাংলার শিল্প ও অর্থনীতিকে ঘিরে ফের বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন বিজেপি–র রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। ঐতিহাসিক পরিসংখ্যান তুলনা টেনে তিনি জানান ১৯৫০–৫১ সালে দেশের মোট শিল্প উৎপাদনের ২৪% অবদান ছিল পশ্চিমবঙ্গের, ২০২১–২২ সালে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ৩.৫% যা তাঁর ভাষায় “লজ্জাজনক ধস”।
জেলা ধরে নেতৃত্ব বদল, ২০২৬ লক্ষ্যে নতুন কৌশল বিজেপির
একসময়ের সুদিনের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও জানান বাংলায় ১০১টি জুটমিল ছিল, ১৯৬০–৬১ সালে উৎপাদন ছিল ৯ লক্ষ MT, অথচ ২০২৫ সালে তা ৭ লক্ষ MT–এ এসে দাঁড়িয়েছে। শিল্পে বৃদ্ধির চিহ্ন নেই, বরং ক্রমাগত পতন। তাঁর মন্তব্য “হুগলির বহু জুটমিল আজ তালাবন্ধ। অন্ধকারে ডুবে আছে আজকের শ্রমিকেরা। চোখে জল, পেটে ক্ষুধা কিন্তু শুনতে নেই কেউ।”
শুধু জুটশিল্প নয় ব্যাংকিং খাতের কথাও তুলেছেন তিনি। ১৯৫৫ সালে দেশের মোট ব্যাংকিং লেনদেনের ২৮% ছিল পশ্চিমবঙ্গের, ২০২৪ সালে তা কমে ৬%। শমিকের দাবি “এ এক অর্থনৈতিক ধ্বংসযজ্ঞ, যা পুরোপুরি শাসকদলের দায়িত্ব।” আরও কড়া সমালোচনা এসেছে FDI বা বিদেশি বিনিয়োগের প্রসঙ্গে। ১৯৯১ সালে ভারতজুড়ে মোট FDI–র ১২% পেত পশ্চিমবঙ্গ অর্থাৎ দেশজুড়ে প্রথম। ২০২৩–২৪ সালে সেই অবদান নেমে ১%–এর নিচে এবং ২০১৯–২০২৪ পাঁচ বছরে মোট FDI মাত্র ০.৬৬%।
প্রসঙ্গত, একই সময়ে মহারাষ্ট্র ৩১% এবং গুজরাত ১৬.৫% FDI অর্জন করেছে। এই তুলনার ভিত্তিতে শমীক ভট্টাচার্যের তোপ “মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক জেদের জন্য পশ্চিমবঙ্গ গুজরাত হতে পারেনি। জনপ্রিয়তার রাজনীতিতে তিনি রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছেন।”
তবে অভিযোগের পাশাপাশি রাজ্যে শিল্প না হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি শিক্ষিত কর্মসংস্থানহীন যুবক সংখ্যা, সরকারি নীতি–অনিশ্চয়তা, ভূমি নীতি, দুর্নীতি আর দলীয় সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছেন। তাঁর কটাক্ষ “তৃণমূল সরকার স্লোগান দিতে জানে, সেলফি তুলতে জানে, ভিডিও বানাতে জানে কিন্তু শিল্প আনতে জানে না।”
একদিকে তীব্র অভিযোগে সরব বিরোধী শিবির শিল্পবিনাশ, আর্থিক পতন ও কর্মসংস্থানের সংকটের অভিযোগে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আগুন জ্বলছে। অন্যদিকে তৃণমূল বলছে শিল্পায়ন চলছে, বিরোধীর সমালোচনা ভিত্তিহীন।
অর্থনৈতিক বাস্তব শিল্প বনাম রাজনীতি, দুইয়ের দ্বন্দ্বে ভবিষ্যতের দিশা খুঁজছে বাংলা। আগামী দিনে শিল্পই কি আবার বাংলার ভাগ্য নির্ধারণ করবে নাকি এই বিতর্কই রাজনীতির বড় অস্ত্র হয়ে উঠবে? উত্তর লুকিয়ে থাকবে সময়ের কাছে।
