কলকাতা: দেশজুড়ে যখন ২০২৭ সালের নাগরিক জনগণনার প্রস্তুতি জোরকদমে চলছে, তখন পশ্চিমবঙ্গের নীরবতা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক উত্তেজনা। দেশের অধিকাংশ রাজ্য ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা মেনে প্রশাসনিক সীমানা চূড়ান্ত করেছে এবং জনগণনা কার্যক্রমে হাত লাগিয়েছে। কিন্তু বাংলা এখনও জনগণনার জন্য আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি যা নিয়ে তীব্র সমালোচনায় সরব হয়েছে বঙ্গ বিজেপি।
রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য আজ বলেন, “কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্যগুলিকে প্রশাসনিক সীমানা নির্ধারণ করতে বলেছিল। ২০২৫ সালের ১৬ জুন গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি হয়, কিন্তু তৃণমূল সরকার এখনও কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।
এই দেরি সাধারণ মানুষের স্বার্থের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার সমান।” তিনি আরও দাবি করেন, “জনগণনা শুধুমাত্র জনসংখ্যার হিসেব নয় এটি হলো দেশের উন্নয়ন, নাগরিক সুবিধা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিকল্পনার মূল ভিত্তি। রাজ্যের এই উদাসীনতা সরকারের প্রশাসনিক অক্ষমতা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আচরণকেই সামনে আনছে।”
এবারের জনগণনা আরও বিশেষ কারণ বহন করছে। বহু বছর পর প্রথমবার জাতভিত্তিক গণনা অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে। ফলে সমাজের বাস্তব কাঠামো ও পিছিয়ে থাকা শ্রেণির প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই ভবিষ্যতের উন্নয়ন প্রকল্প, সংরক্ষণ নীতি, এবং অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নির্ধারণ হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিমবঙ্গ যদি এই প্রক্রিয়ায় দেরি করে, তবে কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডারে রাজ্যের নাগরিকদের সঠিক তথ্য পৌঁছাবে না যার সরাসরি প্রভাব পড়বে সামাজিক ন্যায়বিচার ও উন্নয়ন প্রকল্পে।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, তৃণমূল সরকার ইচ্ছে করেই দেরি করছে যেন জনগণনার রাজনৈতিক প্রতিফলন তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। কারণ জাতভিত্তিক তথ্য প্রকাশ পেলে রাজ্যের ভোট সমীকরণে তা বড় প্রভাব ফেলতে পারে। শমীক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “জনগণের অধিকারকে তুচ্ছ করে মুখ্যমন্ত্রী নিজের রাজনৈতিক সমীকরণ আঁকছেন। জনগণনার মতো সংবেদনশীল বিষয়কে ভোট রাজনীতির আড়ালে ঢেকে রাখা গণতন্ত্রের প্রতি অসম্মান।”
সরকারি সূত্রে অবশ্য বলা হয়েছে, প্রশাসনিক প্রক্রিয়া চলছে এবং রাজ্য নিজের মতো করে সময় নিচ্ছে যাতে তথ্য সংগ্রহে কোনও ভুল না হয়। তবে কেন্দ্রীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যদি রাজ্য আর বিলম্ব করে, তাহলে ২০২৭ সালের জনগণনা থেকে পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে পড়তে পারে।
এই অবস্থায় নাগরিক সমাজে উদ্বেগ বাড়ছে। সরকারি নথি, ভোটার তালিকা, এবং নাগরিক সুবিধার ক্ষেত্রে জনগণনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষত স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান ও সামাজিক কল্যাণমূলক প্রকল্পে এর নির্ভুলতা নিশ্চিত করা জরুরি। কিন্তু রাজ্যের এই ধীর গতি সাধারণ নাগরিকদের অধিকারকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
কেন্দ্র ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করেছে সময়সীমা পার হলে রাজ্য নিজ দায়ে দেরির ফল ভোগ করবে। অন্যদিকে বিজেপি দাবি করেছে, জনগণের স্বার্থে রাজ্য সরকারকে দ্রুত জনগণনার বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে, যাতে গণনা হয় স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং সময়মতো।