ইউপিএ আমলের “কয়লা কেলেঙ্কারির” চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস

upa-coal-scam-cover-up-congress-cag-revelation

নয়াদিল্লি: দেশের রাজনৈতিক মহলে ফের তোলপাড়। প্রায় এক দশক পুরনো ইউপিএ আমলের বহুল আলোচিত “কয়লা কেলেঙ্কারি” (Coal Scam) নিয়ে ফের সামনে এল বিস্ফোরক তথ্য। প্রাক্তন মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও মহা-নিয়ন্ত্রকের (C&AG) প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল পি. সেশ কুমার (P. Sesh Kumar) প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন যে, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে ওই কেলেঙ্কারির অডিট প্রক্রিয়াকে বাধা দিয়েছিল।

Advertisements

সেশ কুমারের দাবি, ২০০৪ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে, যখন মনমোহন সিং নিজে কয়লা মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন, তখনই অসংখ্য কয়লা ব্লক ক্ষমতাবান শিল্পপতিদের মধ্যে বিনা দরপত্রে বিলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে সরকারি কোষাগারে প্রায় ₹১.৮৬ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে জানায় সি&এজি-র রিপোর্ট।

   

ISRO-তে বিভিন্ন পদের জন্য শূন্যপদ ঘোষণা, ITI-রাও আবেদন করতে পারবেন

তবে, এই রিপোর্ট তৈরি হওয়ার আগে কত বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে তা এবার প্রকাশ্যে আনলেন প্রাক্তন আধিকারিক। তাঁর কথায়, “আমাদের অডিট টিমকে ইচ্ছাকৃতভাবে নোংরা ঘরের পাশে থাকার জায়গা দেওয়া হতো, গুরুত্বপূর্ণ ফাইল গায়েব করা হতো, এমনকি বহু সরকারি অফিস থেকে নথি হাতে পেতাম না।” তিনি আরও যোগ করেন, “কয়লা মন্ত্রকের কয়েকজন উচ্চপদস্থ আমলা বারবার বলতেন — কিছু তথ্য ‘জাতীয় স্বার্থে’ প্রকাশ করা যাবে না।”

এই অভিযোগের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে। বিজেপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “এই ঘটনাই প্রমাণ করে ইউপিএ সরকার কেবল দুর্নীতিই করেনি, সেই দুর্নীতি আড়াল করতেও প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করেছে।” দলের মুখপাত্র বলেন, “মনমোহন সিং যখন কয়লা মন্ত্রী ছিলেন, তখনই দেশের সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি ঘটেছে। আজ সেই সব তথ্য একে একে সামনে আসছে।”

Advertisements

অন্যদিকে, কংগ্রেস এই অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উড়িয়ে দিয়েছে। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “সি&এজি-র রিপোর্ট ইতিমধ্যেই সংসদে আলোচিত হয়েছে। আদালতেও বিষয়টি বিবেচিত। এখন নতুন করে এমন বক্তব্য দিয়ে কেবল জনগণের মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরানো হচ্ছে।”

কয়লা কেলেঙ্কারি বা “CoalGate” কেসটি ২০১২ সালে প্রথম আলোচনায় আসে, যখন সি&এজি-র রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসে। সেখানে বলা হয়েছিল, ২০০৪ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে মোট ২০০-রও বেশি কয়লা ব্লক বণ্টনের সময় দরপত্র প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। এতে রাষ্ট্রের বিশাল ক্ষতি হয়েছে। সেই সময় বিরোধী দল বিজেপি সংসদে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখায়, এমনকি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর পদত্যাগও দাবি করা হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নতুন তথ্য যদি সত্যি হয়, তাহলে এটি শুধু প্রশাসনিক অনিয়ম নয় বরং গণতান্ত্রিক স্বচ্ছতার ওপর সরাসরি আঘাত। ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাসে এটিকে “সবচেয়ে বড় সরকারি সম্পদ লুণ্ঠন” হিসেবেই গণ্য করা হয়। প্রাক্তন ডি.জি.-র এই স্বীকারোক্তির পর কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (CBI) এবং অন্যান্য নিরীক্ষা সংস্থাগুলির দিকে এখন তাকিয়ে দেশবাসী। কারণ, এমন গুরুতর অভিযোগের তদন্ত পুনরায় শুরু হওয়া একেবারেই অসম্ভব নয়।