নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অবসর প্রসঙ্গ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহলে চলা জল্পনার মাঝে মুখ খুললেন বিজেপির বর্ষীয়ান নেত্রী ও প্রাক্তন মধ্যপ্রদেশ মুখ্যমন্ত্রী উমা ভারতী । এক বিস্ফোরক মন্তব্যে তিনি জানালেন, “আমরা চাই না মোদীজি এখনই অবসর নিন।
অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল হয়েছে, রাম মন্দির উদ্বোধন হয়েছে, এখন ইউনিফর্ম সিভিল কোড (UCC) আসা বাকি এবং ‘One Nation One Election’ বাস্তবায়ন হলেই তবে অবসর নিতে পারেন তিনি। তার আগে নয়, অন্তত আগামী ১০ থেকে ২০ বছর আমরা তাঁকে অবসর নিতে দেব না!”
“রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হবে!” হুঁশিয়ারি শুভেন্দুর
উমা ভারতীর এই বক্তব্যে নতুন করে উষ্ণতা ছড়িয়েছে রাজনৈতিক পরিসরে। একদিকে যেমন বিজেপির একাংশ এই মন্তব্যকে “দলের মনোভাবের প্রতিফলন” বলে দেখছেন, অন্যদিকে বিরোধী শিবির বলছে, এটি মোদী যুগের দীর্ঘস্থায়ীতার এক স্পষ্ট ইঙ্গিত। উমা ভারতী বলেন, “মোদীজি আমাদের দেশের ইতিহাসের এক পরিবর্তনকারী নেতা।
তিনি শুধু প্রশাসক নন, এক দৃষ্টান্ত। ৩৭০ ধারা তুলে কাশ্মীরকে ভারতের সঙ্গে একসূত্রে বাঁধা, অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন এই সবই তাঁর নেতৃত্বের ফল। এখন তাঁর নেতৃত্বেই আমরা চাই ইউনিফর্ম সিভিল কোড এবং ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন বাস্তবায়িত হোক। তারপরই অবসরের কথা ভাবা যেতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “দেশ এখন মোদীজির মতো নেতাকে প্রয়োজন করছে। তিনি শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বের সামনে ভারতের মুখ। তাঁর নেতৃত্বেই দেশ আত্মনির্ভরতার পথে এগিয়েছে। সুতরাং, এখনই তাঁর বিশ্রাম নেওয়ার সময় নয়।”
বিজেপির অন্তর্গত সূত্রের দাবি, দলের প্রবীণ নেত্রী হিসেবে উমা ভারতীর এই বক্তব্য দলের ভেতরের এক বৃহৎ অংশের মনোভাবের প্রতিফলন। অনেকেই মনে করেন, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্ব ছাড়া ২০২৯-এর নির্বাচনের আগে বিজেপির শক্তি ও জনসংযোগে শৈথিল্য আসতে পারে।
অন্যদিকে, বিরোধীরা এই মন্তব্যকে ব্যাখ্যা করছে ভিন্নভাবে। কংগ্রেসের মুখপাত্র বলেছেন, “উমা ভারতী স্বীকার করে নিচ্ছেন যে বিজেপিতে অন্য কোনও বিকল্প মুখ নেই। সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রীকে ২০ বছর অবসর নিতে দিতে চান না।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উমা ভারতীর মন্তব্যে বিজেপির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনার একটা ইঙ্গিত লুকিয়ে আছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও একাধিকবার বিভিন্ন সভায় বলেছেন, “আমার জীবনের লক্ষ্য দেশের সেবা। যতদিন জনগণ চাইবেন, আমি কাজ করে যাব।”
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ঐতিহাসিক সাফল্যের পর থেকেই বিরোধীরা দাবি করে আসছে যে “মোদী-পরবর্তী যুগ” নিয়ে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। কিন্তু উমা ভারতীর মন্তব্যে বোঝা যাচ্ছে, দলের ভেতরে এখনও সেই অধ্যায় খোলার কোনও ইচ্ছাই নেই।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, “নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা এখনও সর্বোচ্চ পর্যায়ে। তাঁর ভাবমূর্তি, নীতি, এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বিজেপির ভোটব্যাঙ্কের প্রধান ভিত্তি। উমা ভারতীর মতো নেত্রীদের মুখে এমন বক্তব্য আসা তাই একদমই অপ্রত্যাশিত নয়।”
তবে বিজেপির একাংশও মনে করছে, এই মন্তব্যে দলের মধ্যম সারির নেতৃত্বের ওপর কিছুটা চাপ পড়তে পারে, কারণ তাদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও বেড়ে গেল। দেশজুড়ে এখন আলোচনা একটাই মোদী কি তবে আগামী দুই দশকেও নেতৃত্বে থাকবেন? সময়ই তার উত্তর দেবে, কিন্তু উমা ভারতীর এই মন্তব্যে যে বিজেপির অভ্যন্তরীণ বার্তা অনেকটাই স্পষ্ট, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।