ত্রিপুরা হিংসা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে শুরু জল্পনা

tripura-violence-manik-saha-conspiracy-bjp-tipra-motha

আগরতলা: ত্রিপুরার শান্তিরবাজারে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের ঘটনাকে “একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ” বলে উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ড. মানিক সাহা। ধলাই জেলার এই হিংসায় সরকারি আধিকারিক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, এই অশান্তির নেপথ্যে শুধু বাইরের উস্কানি নয়, রাজ্যের রাজনৈতিক জোটের ভিতরেও গভীর টানাপোড়েন কাজ করছে।

Advertisements

শুক্রবার সকালে আগরতলার সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও জিবিপি হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কড়া ভাষায় এই ঘটনার নিন্দা জানান। তিনি বলেন, “এই হামলা একেবারেই পরিকল্পিত। সরকার এ ধরনের হিংসা কোনোভাবেই বরদাস্ত করবে না। পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

চাকরি নয়, যেন নিলাম! হলদিয়া বন্দরে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ অভিযোগ

ঘটনার সময় রাজ্যজুড়ে ২৪ ঘণ্টার বন্‌ধ ডেকেছিল টিপ্রাসা সিভিল সোসাইটি, যা বিজেপি-ঘনিষ্ঠ দল টিপরা মথার সংগঠন। বিজেপি ও টিপরা মথার মধ্যে সাম্প্রতিক কালে যে রাজনৈতিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে, এই হিংসা সেই সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।

সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে সাহা লেখেন, “টিপরা মথার সমর্থকদের হাতে আমাদের সরকারি কর্মী অভিজিৎ মজুমদার, ইঞ্জিনিয়ার অনিমেষ সাহা এবং স্থানীয় কয়েকজন নাগরিকের উপর যে নৃশংস হামলা হয়েছে, তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।

প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ নিতে।” মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন ফেলেছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যাঁরা রাজ্যকে অস্থিতিশীল করতে চাইছেন, তাঁরা সফল হবেন না। এই চাপ সাময়িক, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা কমে যাবে।”

Advertisements

যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, বিজেপির ভেতরকার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও কি এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী, তখন সাহা বলেন, “ষড়যন্ত্রের ছায়া সব জায়গাতেই আছে।” তাঁর এই মন্তব্যকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা গেরুয়া শিবিরের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার লড়াইয়ের এক নীরব স্বীকারোক্তি হিসেবেই দেখছেন।

বৃহস্পতিবার শান্তিরবাজারে বন্‌ধ চলাকালীন দোকান খোলা রাখায় টিপরা মথা-ঘনিষ্ঠ কর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ বাধে। অভিযোগ, দণ্ড ও লাঠি নিয়ে হামলা চালানো হয়, সরকারি আধিকারিকদের উপরেও চড়াও হয় কিছু দুষ্কৃতী। ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার অভিজিৎ মজুমদার, ইঞ্জিনিয়ার অনিমেষ সাহা এবং ব্যবসায়ী সুব্রত পাল গুরুতর আহত হন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, “যে কেউ এই ঘটনায় যুক্ত থাকুক না কেন, কাউকে ছাড়া হবে না।” প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি তদন্তের গতি ত্বরান্বিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই উত্তপ্ত।

বিজেপি ও টিপরা মথার জোটে ফাটল স্পষ্ট হচ্ছে, আর তার মধ্যেই এই হিংসার ঘটনা রাজনীতিতে নতুন ইঙ্গিত দিচ্ছে। আগামী বিধানসভা উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে শক্তির লড়াই শুরু হয়েছে, এই হিংসা সেই অস্থিরতারই প্রতিফলন বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।