মিলন পণ্ডা, ময়না ( পূর্ব মেদিনীপুর ): ২০২৩ সালের ১ মে সন্ধ্যায় ময়না বিধানসভা এলাকায় বিজেপির (BJP) বুথ সভাপতি বিজয়কৃষ্ণ ভূঁইয়ার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিল। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা পালিয়ে যাওয়ায় প্রশাসনিক তদন্ত জটিল হয়ে পড়ে। অবশেষে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ বুদ্ধদেব মণ্ডল নামের এক তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। গ্রেফতারির খবর পাওয়ায় মৃত বিজেপি নেতা বিজয়কৃষ্ণ ভূঁইয়ার পরিবার ও সমর্থকরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
সূত্রে জানা গিয়েছে, এনআইএ বুদ্ধদেব মণ্ডলের ছেলেকে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা থানার একটি আত্মীয়ের বাড়ি থেকে বুদ্ধদেবকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারির পর তাকে কলকাতার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যেখানে তার বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত আরও ত্বরান্বিত হবে।
মৃত বিজেপি নেতা বিজয়কৃষ্ণ ভূঁইয়ার স্ত্রী লক্ষ্মী ভূঁইয়া বলেন, “গ্রেফতার হওয়ার খবর শুনে আমরা খুব খুশি হয়েছি। অভিযুক্তদের যেন শাস্তি হয়। আমরা চাই তাদের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হোক।” এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই মৃত নেতার পরিবার ও সমর্থকরা দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। জানা গিয়েছে, ২০২৩ সালের ১ মে সন্ধ্যায় বিজেপি বুথ সভাপতিকে অপহরণ করা হয়। বাড়ির কাছাকাছি একটি পুকুরপাড় থেকে রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। এই ঘটনার পর মৃত নেতার স্ত্রী লক্ষ্মী ভূঁইয়া একাধিক তৃণমূল নেতা সহ মোট ৩৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং পরে আদালতের নির্দেশে এই মামলাটি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএর হাতে চলে আসে।
এনআইএ তদন্তকারীরা মামলায় অভিযুক্তদের খুঁজে বের করতে মোট ১৪টি টিমে বিভক্ত হয়ে তল্লাশি চালায়। গ্রেফতারির আগে অভিযুক্তদের বাড়ি সিল করে নোটিশ দেওয়া হয়। এই অভিযান চলাকালীন এনআইএ কর্মকর্তারা পালিয়ে থাকা বুদ্ধদেব মণ্ডলকে শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার করতে সক্ষম হন।
স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বরা এই ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, “বিজেপি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে ব্যবহার করে তৃণমূল কর্মীদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। আমরা আইনিভাবে লড়াই চালিয়ে যাব।” এদিকে, বিজেপি নেতারা জানিয়েছেন, যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হত্যাকাণ্ডে যুক্ত, তাদের সবাইকে ধরা হবে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সদস্য ও ময়না বিধানসভা অন্তর্গত বিজেপির ৩ মণ্ডলের সভাপতি উওম সিং বলেন, “এনআইএ ইতিমধ্যেই বুদ্ধদেব মণ্ডল, কমল খুঁটিয়া ও স্বপন ভৌমিকের বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করেছে। চার্জশিটও জমা পড়েছে। তদন্ত চলাকালীন যারা শীর্ষ পর্যায়ে যুক্ত, তাদের কেউ ছাড়া পাবে না।” উল্লেখ্য, এর আগে এনআইএ ময়না ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন সহ-সভাপতি অমিতাভ ভঞ্জ ওরফে বাবু, বাকচা অঞ্চলের প্রাক্তন সহ-সভাপতি সুজিত কর এবং নব কুমার মণ্ডলসহ অন্যান্য তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করেছিল। গ্রেফতারির পরও মামলাটি এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিজেপি নেতারা পুনরায় শাস্তির দাবিতে আদালতে যান এবং এনআইএ তদন্ত শুরু করে। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে এই হত্যাকাণ্ড ময়না ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে যথেষ্ট আলোড়ন তৈরি করেছে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে স্থানীয় জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোতে উত্তেজনা এবং নিরাপত্তা চর্চা নতুনভাবে প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। এনআইএ গ্রেফতার এবং তদন্তকে ত্বরান্বিত করছে। মৃত্যুর দিন থেকে দীর্ঘ সময় ধরে পালিয়ে থাকা বুদ্ধদেব মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ায় এই মামলার সুষ্ঠু বিচার এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত হওয়ার আশা দেখা দিয়েছে।
