শিল্পী পার্থ সংসদে ব্যর্থ! মুখ্য সচেতকের পদ ছেড়ে বিস্ফোরক কল্যাণ

TMC MP Partha Bhowmik Faces Criticism from Kalyan Banerjee for Poor Lok Sabha Attendance

হ্যালো স্যার। ওয়েব সিরিজ ‘আবার প্রলয়ে’ পুলিশের চরিত্রে শিল্পী পার্থ ভৌমিকের সংলাপ। এই শিল্পী এখন বারান্দার তৃণমূল সাংসদ। সংসদে তাঁর পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন তুললেন দলেরই আরেক সাংসদ। শ্রীরামপুরের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee)। বললেন, “পার্থ ভৌমিক কখনও লোকসভায় আসে না।”

Advertisements

সোমবার তৃণমূল সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্য সচেতক হিসেবে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ক্ষুব্ধ কল্যাণ পদত্যাগ করেন। তবে তাঁর ইস্তফা গ্রহণ করেনি দল। বৈঠকের পর সংবাদ মাধ্যমের সামনে একের পর এক বোমা ফাটান শ্রীরামপুরের সাংসদ। লোকসভায় দলের একাধিক সাংসদের গরহাজিরের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “কেউ নাটক করছে, কেউ থিয়েটার করছে, কেউ লোকসভাতে বসে আছে, আবার কেউ কর্পোরেশন দেখছে। দোষ কি শুধুই আমার?”

   

সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেন তিনি। নাম করে আক্রমণ করেন একাধিক সাংসদকে— বিশেষত বারাকপুরের সাংসদ ও জনপ্রিয় নাট্যব্যক্তিত্ব পার্থ ভৌমিককে। “পার্থ ভৌমিক লোকসভায় আসে না। থিয়েটার করছে, নাটক করছে।”

পার্থ ভৌমিক কে?
পার্থ ভৌমিক নৈহাটির প্রাক্তন বিধায়ক। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বারাকপুর কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেন। জনপ্রিয়তা ছিল তাঁর থিয়েটারের কারণে। নাটক, সংস্কৃতি ও অভিনয়— এটাই ছিল তাঁর পরিচিতির মূল ভিত্তি। নির্বাচনের সময় তাঁকে ঘিরে ছিল বিশেষ আগ্রহ ও প্রত্যাশা। কিন্তু সংসদীয় কাজে তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তা এবার দলের ভেতরেই তীব্র হল।

কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কেউ নাটক করছে, কেউ থিয়েটার করছে, কেউ কর্পোরেশন চালাচ্ছে। কেউই লোকসভায় থাকে না। কাকলি ঘোষ দস্তিদার অর্ধেক দিন থাকেন না। দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ মালা রায় সাত বছরে একটা কথাও বলেননি। বাঁকুড়ার সাংসদ একবার মাত্র কথা বলেছেন। এই দলে লোকসভায় নিয়মিত যারা আসেন, তাদের কোনও মূল্য নেই।”

এই প্রসঙ্গে আরও বলেন, “আমি বড়লোকের ছেলে না। অক্সফোর্ড বা কেমব্রিজে পড়িনি। আমি মাঠে স্লোগানিংকরেছি, মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। তাই আমি ‘ineffective’! আর কেউ কেউ দামি শাড়ি পরে, হার্ভার্ডের ডিগ্রি নিয়ে আসেন, তাঁরাই এখন দলের মুখ!”

Advertisements

তাঁর অভিযোগ, দলের মধ্যে যারা বাস্তবে কাজ করছে, লোকসভায় নিয়মিত যাচ্ছে, তাদের কোনও গুরুত্ব নেই। বরং যাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন, তাঁদেরই পরে ‘সম্মানিত’ করা হয়েছে।

এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দলের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত ও নেতৃত্বের প্রতি গভীর হতাশা ও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে জড়িত থাকা এই সাংসদের ক্ষোভ শুধু দলীয় সাংসদদের উপস্থিতি বা কার্যকারিতা ঘিরে নয়, বরং নেতৃত্বের ‘পক্ষপাতমূলক’ মনোভাব নিয়েও।

তৃণমূল কংগ্রেস এখনো কল্যাণের এই বিস্ফোরক মন্তব্যের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে দলীয় শৃঙ্খলার প্রশ্নে এ ধরনের মন্তব্য ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ক্ষোভ ও বিভাজনকে আরও প্রকাশ্যে নিয়ে আসতে পারে বলেই রাজনৈতিক মহলের মত।

নাট্য ব্যক্তিত্ব পার্থ ভৌমিকের নাটকের দল আছে। নিয়মিত মঞ্চে অভিনয় করেন। গত লোকসভা ভোটে বাহুবলী অর্জুনের বিরুদ্ধে প্রচারে নাট্য ব্যক্তিত্ব পরিচয়ই তাঁর বড় অস্ত্র ছিল। সাংসদ হওয়ার পর এ বছর ঘটা করে নাট্য উৎসব করেন বারাকপুরের তৃণমূল সাংসদ। আবার প্রলয় ওয়েব সিরিজে তাঁর ‘হ্যালো স্যার’ বেশ জনপ্রিয় হয়। সেটাও ভোটের প্রচারে ব্যবহার করেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এই ওয়েব সিরিজের পরিচালক তৃণমূলেরই বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী। বারাকপুরের সাংসদের কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আর বারাকপুরের বিধায়কও অনেক দিন রাজনৈতিক চর্চায় নেই। সব ঠিক আছে তো?