কলকাতা: হুমায়ুন কবিরের ছাঁটাইয়ের পরেই তৃণমূলে শুরু হয়েছে ফের ঝাড়াই–বাছাই (Trinamool candidate screening)। সামনে নির্বাচন, আর তার আগেই দলীয় সংগঠনে বড়সড় সার্জারির ইঙ্গিত মিলছে তৃণমূল শিবিরে। সূত্রের দাবি, SIR প্রক্রিয়া শেষ হলেই রাজ্যে যে কোনো দিন ঘোষণা করা হতে পারে বিধানসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ। ফলে এখন থেকেই রাজ্য জুড়ে বাড়ছে নির্বাচনী উত্তেজনা। সব রাজনৈতিক দলই নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে, তবে সবচেয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
দলের শীর্ষ নেতৃত্ব স্পষ্ট করেছে এবার টিকিট শুধু পারফরম্যান্সের ভিত্তিতেই। কেউ “দাদা” ধরে বা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ভরসায় টিকিট পাবেন না। গতবার জিতেছিলেন কিনা, সেটা আর বিবেচনার বিষয় নয়। বরং দেখা হবে গত পাঁচ বছরে বিধায়ক হিসেবে তিনি আসলে কতটা মানুষের পাশে ছিলেন।
নাসার সতর্কবার্তা! আজ পৃথিবীর খুব কাছে থাকবে চারটি গ্রহাণু
তৃণমূল ইতিমধ্যেই সব বিধায়কের কাজকর্ম খতিয়ে দেখা শুরু করেছে। এলাকায় তাঁদের উপস্থিতি, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, কাজের গতি সব কিছুই আলাদা করে নথিভুক্ত করা হচ্ছে। SIR চলাকালীন কোন নেতা কতটা মাঠে ছিলেন, কতটা এগিয়ে এসেছেন সাধারণ মানুষের অভিযোগ শুনতে এগুলি এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড।
দলের পরামর্শদাতা সংস্থাও গ্রাউন্ড সার্ভে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষের মতামত, স্থানীয় অভিযোগ, জনপ্রিয়তা সব কিছু মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে বিশদ রিপোর্ট। সম্প্রতি প্রকাশিত সরকারের “উন্নয়নের পাঁচালি” রিপোর্টও ব্যবহৃত হবে আসন্ন নির্বাচনী প্রচারে। সেই কর্মসূচির বাস্তবায়ন কতটা গুরুত্ব দিয়ে করেছেন বিধায়করা, তাও নোট নেওয়া হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন “আমি চাই সৎ, পরিশ্রমী, মানুষের কাজে যুক্ত নেতৃত্ব। দুর্নীতিপরায়ণ, নিষ্ক্রিয় কেউ দলে থাকবে না।”
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও গত ২৪ নভেম্বরের বৈঠকে একই বার্তা দেন “কোনও দাদা ধরে টিকিট নয়। শুধু পারফরম্যান্স।” বর্তমানে তৃণমূলের অফিশিয়াল বিধায়ক সংখ্যা ২১৯। পাশাপাশি অন্য দল থেকে যোগ দেওয়া পাঁচজন বিধায়কও রিভিউ তালিকায় রয়েছেন। দলীয় সূত্র বলছে, কেউই সুরক্ষিত নন সবাইকে একই ফর্মুলায় বিচার করা হচ্ছে।
তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে কিছু বিভাগে নেতাদের কড়া নজরে রাখা হচ্ছে। এলাকায় মানুষের অভিযোগ থাকলে, টিকিট পাওয়া প্রায় অসম্ভব। দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে সম্পত্তি বাড়ানো, গাড়ি-বাড়ি করার অভিযোগ যাঁদের বিরুদ্ধে আছে তারা রাডারের আওতায়। দুর্ব্যবহারের কারণে দু’জন অভিনেতা-বিধায়ক টিকিট হারাতে পারেন।
যাঁরা গোপনে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন অথবা দলে থেকে “বিভীষণ”-এর ভূমিকা পালন করছেন, তাঁদের জন্য দরজা কার্যত বন্ধ। এবার বয়স কোনও বাধা নয়, নিশ্চিত করেছে তৃণমূলের টপ ব্রাস। উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে বজবজের বিধায়ক অশোক দেবকে। তিনি সত্তর পার করলেও এলাকায় তাঁর পরিশ্রম, মানুষের পাশে থাকা এই গুণেই বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছেন তিনি।
তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছে, নির্বাচন যতই কাছাকাছি আসছে, দলের ভাবমূর্তি ও সংগঠনের কার্যকারিতা রক্ষাই এখন মূল লক্ষ্য। তাই যাঁরা নিষ্ক্রিয় বা বিতর্কে জড়িয়েছেন, তাঁদের টিকিট কাটা অনিবার্য। আর হুমায়ুন কবিরের ছাঁটাইয়ের পরই সেই বার্তা আরও জোরালো হলো দল এখন কোনও আপস করতে রাজি নয়। সামনে নির্বাচন এবার যুদ্ধক্ষেত্রে নামবে তারাই, যাঁরা সত্যিকারের পরিশ্রমী, পরিষ্কার, মানুষের সঙ্গে যুক্ত এবং মাঠে সক্রিয়।


