বালি থেকে কয়লা, কার হাতে তৃণমূলের দুর্নীতির চাবি? বিস্ফোরক বিজেপি

tmc-business-ecosystem-arun-sharaf-abhinna-group-bjp-allegations

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ময়দানে যখন ‘পরিবর্তন’-এর স্লোগান উঠেছিল, তখন থেকেই এক অদ্ভুত সমান্তরাল যাত্রা শুরু হয়েছিল ব্যবসায়িক জগতে। ২০১১ সালের পর থেকে যেন একের পর এক কোম্পানি ফুটে উঠতে লাগল, যাদের নামের আগে ‘অভিন্ন’ শব্দটি যেন একটা মন্ত্রের মতো ঘুরপাক খেত। আর এই সব কোম্পানির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন একজন অরুন শরাফ।

Advertisements

অভিযোগ উঠেছে সম্প্রতি ইডি-র হাতে গ্রেফতার হওয়া এই ব্যক্তি শুধু একটা বালি পাচার মামলার আসামি নন, তিনি যেন একটা পুরো ‘ইকোসিস্টেম’-এর প্রতীক। খবরটা প্রথম শুনে মনে হয়, কয়েক টন বালি নিয়ে এত হইচই! কিন্তু গভীরে ঢুকলে বোঝা যায়, এ গল্প শুধু খনিজের নয়, এ গল্প ক্ষমতা, সংযোগ আর রাজনৈতিক ছত্রছায়ার। অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যাচ্ছে অরুন শরাফের নাম জড়িয়ে আছে অসংখ্য কোম্পানির সঙ্গে।

   

সুপার সেমিতে মানোলোর গোয়ার সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ মুম্বাই সিটির!

তার নাম জড়িয়ে আছে জি ডি উদ্যোগ এলএলপি, অভিন্না এক্সপ্লোরেশন প্রাইভেট লিমিটেড, মেটিস স্টিল প্রাইভেট লিমিটেড, স্কামর্ড মাইনিং প্রাইভেট লিমিটেড, স্টেনোস সিমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড, টাসো অ্যালয়েস প্রাইভেট লিমিটেড, বেঙ্গল সাইকেলস প্রাইভেট লিমিটেড নামে উল্লেখযোগ্য সংস্থা গুলির সঙ্গে। এই তালিকা পড়লে মনে হয়, যেন একটা শিল্পসাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে।

এর আগে তিনি ছিলেন অভিন্না মাইনিং প্রাইভেট লিমিটেড, জি ডি মাইনিং প্রাইভেট লিমিটেড, অ্যাগলো বন্ড প্রাইভেট লিমিটেড, অভিন্না ইনভেস্টমেন্টস প্রাইভেট লিমিটেড, অভিন্না রিনিউএবল এনার্জি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি গুলির সঙ্গে। আশ্চর্যের বিষয়, এই সব কোম্পানির অধিকাংশই জন্ম নিয়েছে বা সক্রিয় হয়েছে ২০১১-এর পর। ঠিক সেই সময়, যখন বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের ‘সবুজ যুগ’ শুরু হয়েছিল।

Advertisements

বিরোধীদের অভিযোগ এই ঘটনা কি কাকতালীয়? নাকি একটা সুনির্দিষ্ট স্রোতের অংশ?এই কোম্পানিগুলোর কার্যক্ষেত্র দেখলে চোখ কপালে ওঠে। খনন, ইস্পাত, সিমেন্ট, অ্যালয়, সাইকেল, বায়োটেক, নির্মাণ, বিমান, কয়লা ধোয়া, বিদ্যুৎ, পাওয়ার ট্রেডিং, হাইড্রোকার্বন, প্রাকৃতিক গ্যাস একজন মানুষ কীভাবে এত বিচিত্র ক্ষেত্রে হাত পাকান? উত্তর লুকিয়ে আছে সরকারি প্রকল্পগুলোতে। উদাহরণস্বরূপ, পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা WBSEDCL-এর দেউচা পচামী কয়লা খনি প্রকল্প।

এটি দেশের সবচেয়ে বড় কয়লা ব্লকগুলোর একটি। মার্চ ২০২৪-এ এই প্রকল্পের মাইন ডেভেলপার এন্ড অপারেটর (MDO) কন্ট্রাক্ট দেওয়া হয় একটি কনসোর্টিয়ামকে, যার অন্যতম সদস্যঅভিন্না মাইনিং প্রাইভেট লিমিটেড। আর জুলাই ২০২৪ পর্যন্ত এই কোম্পানির ডিরেক্টর ছিলেন স্বয়ং অরুন শরাফ। এখন ইডি-র তদন্তে বেরিয়ে আসছে, ভুয়ো চালান, আত্মসাৎ, বালি পাচারের টাকা গায়েব করা সবই এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে।

বাইরে থেকে দেখলে মনে হয়, উন্নয়নের ধারা বইছে। নতুন খনি, নতুন চুক্তি, নতুন কোম্পানি সবই অর্থনৈতিক প্রগতির ছবি। কিন্তু ভিতরে ঢুকলে ছবিটা বদলে যায়। বালি পাচার শুধু নদীর তীর থেকে ট্রাকে তোলা নয়, এটা একটা বড় খেলা। লাইসেন্স, কোটা, সরকারি অনুমোদন সবকিছুতে রাজনৈতিক সংযোগের ছোঁয়া।

বিজেপি নেতা এবং বিশিষ্ট আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারির মতে তৃণমূলের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে এই ‘অভিন্ন’ গ্রুপের ফুলে ওঠা যেন একটা সমান্তরাল গল্প। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন ভাইপোর আশীর্বাদ, সরকারি টেন্ডার, খাদানের লিজ সব মিলে একটা ‘অভিন্ন ইকোসিস্টেম’ তৈরি হয়েছে। ইডি-র গ্রেফতারি এই ইকোসিস্টেমের প্রথম ফাটল। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এটা কি শুধু অরুন শরাফের একার খেলা? নাকি বড় ছবির একটা অংশ?