টেট দুর্নীতিতে পার্থর দোসর প্রথম সারির নেতা? নাম ফাঁস হাইকোর্টে

tet-scam-calcutta-high-court-partha-abhishek-link

কলকাতা: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ফের তীব্র অস্বস্তিতে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানিতে একের পর এক প্রশ্নের মুখে পড়ে প্রাথমিক বোর্ড। আদালতের কটাক্ষ, “যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত, অথচ অযোগ্যরা চাকরি পেয়েছেন কেন?”

Advertisements

৩২,০০০ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের মামলাকে ঘিরে এদিন আদালতে রীতিমতো নাটকীয় মোড় নেয়। মামলাকারীদের আইনজীবীরা জানান, “এই নিয়োগ দুর্নীতির মূলে রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক কারচুপি।” আদালতের সামনে সরাসরি তোলা হয় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম।

   

ভোটার তালিকা সংশোধনে আদালতের নজরদারি? SIR নিয়ে মামলা গ্রহণ করল হাইকোর্ট

আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য, ফিরদৌস শামিম এবং সুদীপ্ত দাশগুপ্ত আদালতে যুক্তি দেন “এই নিয়োগ প্রক্রিয়া কোনওভাবেই স্বচ্ছ ছিল না। রাজনৈতিক নির্দেশেই তালিকা বদলে গেছে। যোগ্য প্রার্থীরা বাদ পড়েছেন, অযোগ্যদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”

বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত মিত্রের বেঞ্চ প্রশ্ন তোলে “পুরুলিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ রাজ্যের নানা জেলায় একই অভিযোগ কেন? যদি কিছু জেলা বা প্রার্থী বঞ্চিত হন, তবে তার দায় কার?” আদালতে উঠে আসে “এস বাসু রায় কোম্পানি”-র নামও। বেঞ্চের প্রশ্ন, “এই সংস্থা কি শুধুই টেট ২০১৪ পরিচালনার কাজ করেছে? নাকি নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও তাদের প্রভাব ছিল?” এ নিয়েই শুরু হয় নতুন বিতর্ক।

একইসঙ্গে আদালত জানতে চায়, ডিপিএসসি (DPSC) থেকে বোর্ড চেয়ারম্যানের হাতে নিয়োগের ক্ষমতা হস্তান্তরের যে সংশোধনী করা হয়েছিল, তা কি রাজ্য সরকারের অনুমোদন নিয়েই হয়েছিল? বিচারপতিরা প্রশ্ন তোলেন, “পুরো প্রক্রিয়াটি কি নিয়ম অনুযায়ী সম্পন্ন হয়েছিল, নাকি নিয়মের বাইরে গিয়ে করা হয়েছে?”

Advertisements

হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে এই সমস্ত বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান জানাতে হবে। আদালত বলেছে, “বোর্ডকে বলতে হবে, এই নিয়োগ প্রক্রিয়া ঠিক কোন নিয়মে সম্পন্ন হয়েছে, কারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবং কেন নির্দিষ্ট যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বহু প্রার্থী চাকরি পাননি।”

এছাড়া আদালত আরও নির্দেশ দিয়েছে, সিবিআই-এর চার্জশিটে টেট দুর্নীতি নিয়ে যে অভিযোগগুলি রয়েছে, সেগুলি সম্পর্কেও বোর্ডকে তাদের অবস্থান জানাতে হবে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের প্রাথমিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অনুমোদন ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছিল। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয় এমন প্রার্থীদের নিয়োগের ক্ষেত্রেও নিয়মভঙ্গের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। এই বিষয়েও বোর্ডের ব্যাখ্যা চেয়েছে আদালত।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যদিও রাজ্য নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে, তবে পুরনো মামলাগুলোর জট এখনও কাটেনি। আদালতের পর্যবেক্ষণ, “যখন একক বেঞ্চ চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে, তখন সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে গেলে বোর্ডকে যুক্তিসহ ব্যাখ্যা দিতে হবে কোথায় ভুল হয়েছিল।” বিচারপতিরা মন্তব্য করেন, “একজন প্রার্থী যদি যোগ্য হয়, আর তবুও চাকরি না পায়, তবে সেটি শুধু একটি ভুল নয়, এটি প্রশাসনিক ব্যর্থতা। এখন বোর্ডকে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে।”

প্রাথমিক বোর্ডের আইনজীবীরা এদিন আদালতে জানান, তাঁরা পরবর্তী শুনানিতে সমস্ত নথি ও যুক্তি পেশ করবেন। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ৬ নভেম্বর নির্ধারিত হয়েছে। রাজ্য রাজনীতিতে এই মামলার প্রভাব স্পষ্ট। বিরোধীদের বক্তব্য, “টেট দুর্নীতি শুধু আর্থিক নয়, এটি প্রশাসনিক দুর্নীতিরও প্রতীক।”

অন্যদিকে তৃণমূলের দাবি, “বিচার প্রক্রিয়া চলছে, বিরোধীরা রাজনৈতিক স্বার্থে বিষয়টি ব্যবহার করছে।” তবে আদালতের পর্যবেক্ষণ ও প্রশ্নের ঝড় নতুন করে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর ও বোর্ডকে অস্বস্তিতে ফেলেছে আর পার্থ–অভিষেক প্রসঙ্গ ফের মামলার কেন্দ্রে উঠে আসায়, টেট দুর্নীতি মামলার রাজনৈতিক তাপমাত্রা আরও এক ধাপ বেড়েছে।