কলকাতা: দিল্লির মারাত্মক বিস্ফোরণ নিয়ে রাজনৈতিক তরজায় ফের আগুন জ্বালালেন বিজেপি নেতা ও বিশিষ্ট আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি। মঙ্গলবার তৃণমূল সাংসদ পার্থ ভৌমিক ও মন্ত্রী শশী পাঁজার মন্তব্যকে ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিক এবং শশী পাঁজা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “দিল্লি বিস্ফোরণের দায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড়সড় ব্যর্থতা ঘটেছে।” তাঁদের এই বক্তব্যের পরেই বিজেপি নেতা তরুণজ্যোতি পাল্টা আক্রমণ শানান।
দিল্লি বিস্ফোরণ নিয়ে দ্বিতীয় দফার বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
তরুণজ্যোতি তিওয়ারি বলেন, “নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ত্রুটি নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা হতেই পারে, কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের মুখে এই সমালোচনা মানায় না। ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিকের এলাকায় খুন, দুষ্কৃতি, গ্যাংওয়ার সবই এখন নিয়মিত ঘটনা। আর মন্ত্রী শশী পাঁজার নিজের কেন্দ্রে বছরের পর বছর নারী পাচার চক্র সক্রিয়। অথচ মন্ত্রী মহাশয়া বলেন, তিনি কিছুই জানেন না! এমন নেতারা দিল্লির বিস্ফোরণ নিয়ে বক্তৃতা দেবেন?”
তরুণজ্যোতি আরও বলেন, “গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা প্রায় রোজকার হয়ে উঠেছে—বগটুই, ঢোলাহাট, এগরা, দত্তপুকুর, ভূপতিনগর… প্রতিটি জায়গায় মানুষ মারা গিয়েছে। উৎসবের মাঝেও মুর্শিদাবাদে বোমা ফেটে প্রাণ গেছে নিরপরাধদের। এসবের দায় কে নেবে? রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একবারও দায় স্বীকার করেছেন কি?”
তিনি তৃণমূলের দিকে তোপ দেগে বলেন, “বল ভেবে খেলা করতে গিয়ে বোমা বিস্ফোরণে শিশু মারা যাচ্ছে—এই খবর পড়ে পশ্চিমবঙ্গবাসীর চোখ ক্লান্ত। তবু মুখ্যমন্ত্রী, যিনি রাজ্যের পুলিশমন্ত্রীও, পদত্যাগ তো দূরের কথা, সামান্য জবাবদিহিও করেননি।”
বিজেপি নেতার অভিযোগ, রাজ্যে বোমা-বারুদ নিয়ন্ত্রণে কোনও বৃহৎ অপারেশন হয়নি। বরং জঙ্গি সংগঠন ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’-এর সঙ্গে যুক্ত শেখ শাদ রাডির মতো দোষীদের কিছু তৃণমূল নেতা ভোটার কার্ড পর্যন্ত বানিয়ে দিয়েছিলেন, সেই অভিযোগেও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তরুণজ্যোতির তির্যক মন্তব্য, “ভোটব্যাঙ্ক বাঁচানোই যদি একমাত্র লক্ষ্য হয়, তাহলে বোমা বাঁচানো আর মানুষ বাঁচানো—দুটোই তো অসম্ভব।”
দিল্লি বিস্ফোরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার এখানে দায় এড়ায়নি। কেউ ‘টিভি ব্লাস্ট’-এর মতো হাস্যকর তত্ত্ব দেয়নি, কেউ বিরোধীদের দোষ দেয়নি। বরং ঘটনার দুই ঘণ্টার মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছেন, রাত পর্যন্ত বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট বলেছেন—ষড়যন্ত্রকারীদের কাউকে রেয়াত করা হবে না।”
তরুণজ্যোতির বক্তব্যে স্পষ্ট ছিল রাজনৈতিক কটাক্ষের সুর। তিনি বলেন, “যে দলের শাসনে প্রতি মাসে রাজ্যের কোথাও না কোথাও বিস্ফোরণে মানুষ মরছে, সেই দল দিল্লির ঘটনার পাঠ শেখাবে? এটি রাজনৈতিক দ্বিচারিতা ছাড়া আর কিছু নয়।”
রাজনৈতিক মহলে তরুণজ্যোতির এই বক্তব্য ঘিরে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বও তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে। অপরদিকে, তৃণমূল সূত্রে পালটা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলা হয়েছে, “তরুণজ্যোতি তিওয়ারির বক্তব্য সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। বিজেপি নিজস্ব ব্যর্থতা ঢাকতে অন্যদের দিকে আঙুল তুলছে।” তবে দিল্লির বিস্ফোরণ নিয়ে যে এখন রাজনৈতিক অঙ্ক আরও জটিল হচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে দোষারোপের পাল্টা পাল্টি তর্কে রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।


