পুজোর উদ্বোধনে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে শুভেন্দু

suvendu-adhikari-protest-south-24-parganas

দক্ষিণ ২৪ পরগনা: দীপাবলি ও কালীপুজোর আবহে দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি কালীপুজো উদ্বোধনে গিয়ে প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়লেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শনিবার তাঁর গাড়ি আটকানোর চেষ্টা, পাথর ছোঁড়া ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ এই আক্রমণ ছিল পরিকল্পিত এবং এর নেপথ্যে রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা পরিষদের সদস্য রেখা গাজি, যিনি স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় এই বিশৃঙ্খলা ঘটিয়েছেন।

Advertisements

ঘটনাটি ঘটে লালপুর মাদ্রাসার সামনে। শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, তাঁর গাড়ির ওপর একাধিকবার আক্রমণের চেষ্টা করা হয় অন্তত সাতটি আলাদা জায়গায় তাঁকে আটকে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তিনি বলেন, “আমি কোনও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলাম না। কালীপুজো ও দীপাবলির শুভক্ষণে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলাম একজন হিন্দু হিসেবে। কিন্তু আমাকে বাধা দেওয়া হল, অপমান করা হল।”

‘সব শেষ’! সাংসদ-আবাসনে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় তুমুল রাজনৈতিক চাপানউতোর

শুভেন্দুর অভিযোগ, বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে প্রবেশ করা মুসলিম অনুপ্রবেশকারী। তাঁর দাবি, “এই এলাকা বাংলাদেশের সীমান্তে বলে বহু অনুপ্রবেশকারী এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছে, আর তাদের আশ্রয় দিচ্ছে তৃণমূলের অনুপ্রবেশ-বান্ধব ইকোসিস্টেম।” তিনি আরও বলেন, “এই লোকেরা SIR প্রক্রিয়ার কারণে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কিত, তাই তারা রাগ প্রকাশ করছে।”

বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনার প্রতিবাদে দল প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। দলের দাবি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শিথিলতা দেখিয়েছে, যাতে শুভেন্দু অধিকারীকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো যায়। বিজেপির মুখপাত্র জানিয়েছেন, “একজন বিরোধী দলনেতা যদি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতেও নিরাপদ না থাকেন, তাহলে রাজ্যে গণতন্ত্রের অবস্থা কী দাঁড়িয়েছে?”

Advertisements

অন্যদিকে, তৃণমূলের পক্ষ থেকে সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দলের স্থানীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, “শুভেন্দু অধিকারী নিজেই রাজনীতি করতে পুজোর মঞ্চ ব্যবহার করছেন। এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ জানিয়েছে, এর সঙ্গে কোনও সংগঠিত হামলার সম্পর্ক নেই।”

এই ঘটনার পর শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, তিনি কোনও ভয় পান না এবং আবারও ওই এলাকায় ফিরবেন। তাঁর কথায়, “আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। জগদ্ধাত্রী পুজোর সময়ও আমি এই এলাকায় ফিরব। আমি হিন্দু ধর্মীয় উৎসবে অংশ নেওয়ার অধিকার থেকে সরে দাঁড়াব না।”

ঘটনার পর প্রশাসনের তরফে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যদিও স্থানীয়দের একাংশের মতে, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সাম্প্রদায়িক বিভাজন এই ঘটনার মূল কারণ। পুজোর আনন্দে রাজনীতির ছায়া পড়ায় সাধারণ মানুষ হতাশ।

একইসঙ্গে, বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু উৎসবের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং ধর্মীয় মেরুকরণ উভয়ই নতুন নয়। তবে সাম্প্রতিক এই ঘটনা রাজ্যে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছে।