কলকাতা: বিধানসভা ভোটের গরম হাওয়ায় রাজ্য রাজনীতিতে ফের চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে এলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। কোলাঘাটে তাঁর অফিসে পুলিশি হানার মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে এবার বড় স্বস্তি পেলেন তিনি।
সোমবার বিচারপতি শুভ্রা ঘোষের এজলাসে এই মামলার শুনানিতে আদালত জানিয়েছে, কোলাঘাট থানার করা স্বতঃপ্রণোদিত এফআইআর-এর ভিত্তিতে আপাতত কোনও তদন্ত বা প্রক্রিয়া করা যাবে না। আদালতের এই অন্তর্বর্তী নির্দেশ কার্যকর থাকবে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
সঞ্জুকে চেন্নাই নিলে, ‘জাদ্দুর’ সঙ্গে এই তারকা পেসারকে চাইছে রাজস্থান!
ঘটনাটি ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়কার। সেই সময় পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটে বিরোধী দলনেতার অফিসে হানা দেয় পুলিশ। শুভেন্দু অধিকারীর দাবি ছিল, কোনও তল্লাশি পরোয়ানা ছাড়াই তাঁর ভাড়াবাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছিল এবং তাঁকে রাজনৈতিকভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেন।
তখনই বিচারপতি অমৃতা সিনহা পুলিশি অভিযানে স্থগিতাদেশ দেন। সোমবারের শুনানিতে সেই রক্ষাকবচের সময়সীমা আরও বাড়িয়ে দিল হাইকোর্ট। বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, ২২ মে ২০২৪ তারিখে দায়ের হওয়া ওই এফআইআরের উপর ভিত্তি করে কোনও প্রক্রিয়া চালানো যাবে না, এবং ৮ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। এর ফলে আপাতত শুভেন্দু অধিকারীর বাড়ি বা অফিসে কোনও নতুন পুলিশি তল্লাশি করা যাবে না। এই রায়কে বিজেপি শিবিরে বড় জয় হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
বিজেপির এক নেতা বলেন, “যেভাবে রাজ্য সরকার বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে প্রশাসনকে ব্যবহার করছে, তা গণতন্ত্রের পরিপন্থী। আদালতের এই রায় প্রমাণ করল শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।” অন্যদিকে রাজ্যের তরফে আইনজীবীরা আদালতে যুক্তি দেখান, পুলিশ জানত না যে ওই বাড়িটি শুভেন্দু অধিকারীর নামে ভাড়া নেওয়া। তদন্ত চলাকালীন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ওই স্থানে অভিযান চালানো হয়েছিল বলেও দাবি রাজ্য সরকারের।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই রায় ভোটের আবহে বিজেপিকে কিছুটা অক্সিজেন দেবে। শুভেন্দু অধিকারী দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিশোধ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। এই রায় তাঁর অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।প্রসঙ্গত, শুভেন্দু অধিকারী একাধিক মামলায় রাজ্যের প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি থেকে শুরু করে প্রশাসনিক পক্ষপাত সবেতেই তিনি সরব। এবার কোলাঘাট মামলায় হাইকোর্টের রক্ষাকবচে তিনি কার্যত আরও আত্মবিশ্বাসী।
বিচারপতির নির্দেশের পর বিরোধী দলনেতার ঘনিষ্ঠ মহল জানিয়েছে, এই রায় শুধু শুভেন্দুর ব্যক্তিগত স্বস্তি নয়, বরং রাজ্যে ন্যায়বিচার ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার পক্ষে এক বড় পদক্ষেপ। রাজ্য রাজনীতিতে ইতিমধ্যেই এই মামলাকে কেন্দ্র করে নতুন করে মেরুকরণ শুরু হয়েছে।
একদিকে বিজেপি বলছে আদালতের রায় জনগণের জয়, অন্যদিকে তৃণমূলের দাবি বিচারিক প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি, তাই এখনই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো অনুচিত। তবে বাস্তবিক অর্থে, এই অন্তর্বর্তী নির্দেশের ফলে শুভেন্দু অধিকারী আপাতত আইনি নিরাপত্তা পেলেন, যা বিধানসভা ভোটের আগে তাঁকে আরও রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় করে তুলতে পারে।


