কলকাতা: এসএসসি কাণ্ডে দাগি তালিকা প্রকাশ হতেই সেখানে নাম দেখা যায় তৃণমূল ঘনিষ্টদের। যারা পাস না করেও শুধু মাত্র তৃণমূল যোগেই চাকরি করছিল। এবার সেই অনিয়মের তালিকায় উঠে এল BLO দের নাম। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তার অভিযোগে স্পষ্ট করেছেন যে তৃণমূল কংগ্রেস নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ‘খোলাখুলি দখল’ করেছে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ২১২ নম্বর এসি-র ১৩ নম্বর পার্ট (মণিনাথপুর প্রাইমারি স্কুল) এর বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) হিসেবে নবকুমার মল্লিককে নিযুক্ত করা হয়েছে, যিনি পটাশপুর-১ ব্লকের নির্বাচিত পঞ্চায়েত সমিতি সদস্য রিতা ভঞ্জ মল্লিকের স্বামী।
দেশীয় শেয়ারবাজারে বড় উত্থান, ট্রাম্পের মন্তব্যে আলোচনায় ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য চুক্তি
এই নিয়োগ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশ লঙ্ঘন বলে দাবি করে শুভেন্দু বলেছেন, “এটা শুধু একটা ঘটনা নয়, রাজ্যজুড়ে বিএলও তালিকায় টিএমসি-পন্থী, আত্মীয়স্বজন এবং অনুগতদের ভর্তি করে নির্বাচনকে প্রহসন বানানো হয়েছে।”
এই অভিযোগ বিহারের নির্বাচনের প্রসঙ্গে উঠেছে, যেখানে পশ্চিমবঙ্গের মতো ‘ঠিকাদারি’র অভিযোগ উঠছে। ইসি-র নির্দেশে বিএলও হিসেবে নিরপেক্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগ করতে হয়, কিন্তু টিএমসি শাসনকালে দলীয় কর্মী, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের স্বজন এবং রাজনৈতিক ঝোঁকের পড়শালাদের বসিয়ে ভোটার তালিকা ম্যানিপুলেট করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
রাজ্যজুড়ে বিএলও নিয়োগের পূর্ণ অডিটের দাবি তুলেছেন শুভেন্দু। শুভেন্দুর এই পোস্টে তিনি বিস্তারিত তথ্য দিয়ে বলেছেন, “নবকুমার মল্লিকের নাম বিএলও তালিকায় দেখে মনে হয়েছে, টিএমসি নির্বাচনকে নিজের খেলার মাঠ বানিয়েছে।
তার স্ত্রী রিতা ভঞ্জ মল্লিক পটাশপুর-১ ব্লকের টিএমসি পঞ্চায়েট সমিতি সদস্য, যা সরাসরি ইসি-র নিয়ম ভঙ্গ। এমন নিয়োগ ভোটার তালিকায় নাম কাটা-জোড়া ভুয়া ভোটার যোগ করা সবকিছুর পথ সহজ করে দেয়।” বিজেপির দাবি, এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় হাজার হাজার বিএলও পদে টিএমসি-সমর্থকদের বসানো হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার এসি-তে একজন টিএমসি অফিস বেয়ারকে বিএলও করা হয়েছে, যার জন্য রাজ্যের চিফ ইলেকটোরাল অফিসার (সিইও) রিপোর্ট চেয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় এসি-তেও একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে, যা গত সাত দিনে দ্বিতীয় ঘটনা। সিইও অফিস জানিয়েছে, ইসি-র নির্দেশ লঙ্ঘন করে যে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা এমন নিয়োগ ক্লিয়ার করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২০২৫-এর শুরুতে নির্বাচন কমিশন রাজ্যে ২০০০-এর বেশি বুথে অনিয়মিত বিএলও নিয়োগের তথ্য পেয়ে বড় ধরনের প্রতিস্থাপন অভিযান শুরু করেছে। সিইও অফিসের তথ্য অনুসারে, বিএলও-রা ভোটার তালিকা আপডেট, ভোটার সচেতনতা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মূল চাক্ষুষ।
ইসি-র স্পষ্ট নির্দেশ, তারা হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারি কর্মকর্তা, যাতে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব না পড়ে। কিন্তু বিজেপির অভিযোগ, টিএমসি শাসনে এই পদগুলো দলীয় কর্মীদের জন্য ‘পুরস্কার’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পার্টি কর্মী, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের স্বামী-স্ত্রী, এমনকি রাজনৈতিক ঝোঁকের পড়শালা (প্যারা-টিচার)দের বসিয়ে ভোটার তালিকায় ‘ঠিকাদারি’ চালানো হচ্ছে। শুভেন্দু বলেছেন, “এটা ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনের ধারণাকে বদলে দিচ্ছে। রাজ্যজুড়ে বিএলও তালিকার পূর্ণ অডিট না হলে নির্বাচনের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।”


