কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ময়দানে তৈরী হয়েছে নতুন উত্তেজনা। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছেন, গত ১৯ অক্টোবর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সুন্দরবন পুলিশ জেলার বিভিন্ন এলাকায় তাঁর উপর পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়েছে। কালীপুজো ও দীপাবলি উৎসবে যোগ দিতে যাওয়ার সময় কাশীনগর, কুলতলি, খুটিবাজার, রায়দিঘি, নবদোকান ও কৃষ্ণচন্দ্রপুরে অজ্ঞাত দুষ্কৃতিকারীরা তাঁকে আক্রমণ করেছে বলে তিনি দাবি করেছেন।
কালীপুজোয় সোনার রূপে ঝলমল নৈহাটির বড়মা, ভক্তদের উপচে পড়া ভিড়
এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তিনি গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন, বলেছেন যে পুলিশ শুধু নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়নি, বরং দুষ্কৃতীদের জমায়েতে সহায়তা করেছে। শুভেন্দু অধিকারী এই হামলাকে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের ‘মরিয়া ষড়যন্ত্র’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যেখানে ‘বেআইনি বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের’ উসকানি দিয়ে বিরোধী দলের উপর হামলার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
এই ঘটনায় শুভেন্দুর আইনজীবী সংশ্লিষ্ট থানাগুলিতে একাধিক এফআইআর দায়ের করেছেন। তিনি হামলাকারীদের নাম প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। রায়দিঘি পুলিশ স্টেশনের অধীনে নবদোকান মোড়ে নুর মহম্মদ, আনার মোল্লা ও হাজী মোল্লার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। একই থানার কাটানদিঘিতে মনসুর, ছোটু মোল্লা, আলা খান, জাবির মোল্লা ও সাদা মোল্লাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
মন্দিরবাজার পুলিশ স্টেশনের দক্ষিণ বিষ্ণুপুরে রেখা গাজী (জেডপি সদস্য) ও শবানার নাম উঠে এসেছে। এছাড়া মথুরাপুর পুলিশ স্টেশনের খুটিবাজারে আমির হুসাইন লস্কর, রশিদ ফকির, মোবারক মোল্লা, সাহাউদ্দিন পাইক ও সাদ্দাম লস্করকে দায়ী করা হয়েছে। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, এই হামলা কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়, বরং তৃণমূলের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।
সুন্দরবনের এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির উপর নতুন আলো ফেলেছে। স্থানীয়রা বলছেন, দীপাবলি ও কালীপুজোর মতো উৎসবের সময় এমন হামলা শুধু রাজনৈতিক উত্তেজনাই নয়, সাম্প্রদায়িক বিভেদকেও উস্কে দিতে পারে। শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, তৃণমূল বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ব্যবহার করে রাজনৈতিক লাভের চেষ্টা করছে, যা একটি গুরুতর অভিযোগ।
তবে তৃণমূলের পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। স্থানীয় তৃণমূল নেতারা বলছেন, এই অভিযোগ রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তদন্তের পর সত্য বেরিয়ে আসবে। শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, তিনি এই ঘটনার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন। তাঁর আইনজীবী দল ইতিমধ্যে এফআইআর দায়ের করেছে এবং তদন্তে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
রাজ্যের বিরোধী দল হিসেবে বিজেপি এই ঘটনাকে তুলে ধরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে জনমত গড়ার চেষ্টা করছে। সামাজিক মাধ্যমে শুভেন্দুর পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে, এবং অনেকে তাঁর সমর্থনে কথা বলছেন। তবে কেউ কেউ বলছেন, এই ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা সুন্দরবনের শান্তি নষ্ট করতে পারে।