SIR আবহে মুর্শিদাবাদে নেমেছে পদবি পরিবর্তনের ঢল

surname-change-controversy-murshidabad-bangladesh-infiltration

বহরমপুর: মুর্শিদাবাদে SIR আবহে ফের ছড়িয়েছে চাঞ্চল্য। সূত্রের খবর অনুযায়ী প্রায় আড়াই লক্ষেরও বেশি বাংলাদেশি নাগরিক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করে নিজেদের পরিচয় গোপন করেছেন। তাঁরা পূর্বের মুসলিম উপাধি যেমন শেখ, খান, মোল্লা ইত্যাদি বাদ দিয়ে বাঙালি হিন্দু উপাধি যেমন মণ্ডল, সরকার, চৌধুরী, বিশ্বাস, দাস ইত্যাদি গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ। এই কাজে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের একাংশের মদত রয়েছে বলেও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

Advertisements

তদন্তকারীদের দাবি, এই অনুপ্রবেশকারীরা শুধু উপাধি বদলাননি, অনেকে নিজের শ্বশুরকে বাবা দেখিয়ে জন্ম শংসাপত্র তৈরি করেছেন। তারপর সেই ভুয়ো শংসাপত্রের ভিত্তিতে আধার কার্ড, রেশন কার্ড এবং সর্বোপরি ভোটার কার্ড সংগ্রহ করেছেন। মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি, ভগবানগোলা, রানিনগর, জঙ্গিপুর, সমশেরগঞ্জের মতো সীমান্তবর্তী ব্লকগুলিতে এই প্রক্রিয়া সবচেয়ে বেশি দেখা গিয়েছে।

   

বিশেষ সমাবর্তনে বিশ্বজয়ী হরমনপ্রীতকে সাম্মানিক ডি লিট যাদবপুরের

একটি গোপন ক্যামেরায় ধরা ভিডিওতে কয়েকজন ব্যক্তি স্বীকার করেছেন যে, তাঁরা বাংলাদেশের বাসিন্দা ছিলেন এবং এখন ভারতের ভোটার হয়ে প্রতি নির্বাচনে একই রাজনৈতিক দলকে ভোট দিয়ে আসছেন। তাঁদের ভাষ্য, “আমরা যাকে ভোট দিই, সেই দলই আমাদের এখানে থাকতে সাহায্য করে।”এই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, শুধু মুর্শিদাবাদেই প্রায় ২ লক্ষ ৬৮ হাজারের বেশি এমন সন্দেহজনক ভোটারের নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে।

জেলার মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ২৮ লক্ষের কাছাকাছি। অর্থাৎ প্রতি দশজন ভোটারের মধ্যে একজনের বেশি এই ধরনের সন্দেহজনক ভোটার হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের জালিয়াতি শুধু জনসংখ্যার গঠন বদলে দেয় না, রাজনৈতিক সমীকরণেও বিরাট প্রভাব ফেলে। মুর্শিদাবাদের বেশ কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্রে মুসলিম ভোটারদের সংখ্যা হঠাৎ করেই বেড়ে যাওয়ার পিছনে এই প্রক্রিয়াই দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisements

এই অভিযোগ যখন প্রকাশ্যে এল, তখন স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিগত কয়েক বছরে ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় যে বিশেষ তৎপরতা দেখানো হয়েছিল, তাতে হাজার হাজার নতুন নাম যোগ হয়।

কিন্তু সেই নামগুলির যাচাই-বাছাই কতটা কঠোর ছিল, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন অনেকে। বিজেপি নেতারা এই ঘটনাকে “দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি” বলে অভিহিত করেছেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এনআরসি প্রয়োগের দাবি জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, শাসক তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগকে “বিজেপির রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র” বলে উড়িয়ে দিয়েছে এবং বলেছে, এসব গুজব ছড়িয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভয় দেখানো হচ্ছে।যদি মুর্শিদাবাদের এই চিত্র সত্যি হয়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য সীমান্তবর্তী জেলা উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মালদা, দক্ষিণ দিনাজপুরেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রাজ্যের জনসংখ্যার ভারসাম্য, ভোটের রাজনীতি এবং জাতীয় নিরাপত্তা; তিনটি ক্ষেত্রেই এর গভীর প্রভাব পড়তে পারে। নির্বাচন কমিশন এখনও এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। কিন্তু যত দিন এই অভিযোগের স্বচ্ছ তদন্ত হচ্ছে না, তত দিন রাজ্য রাজনীতির আকাশে এই কালো মেঘ আরও ঘনীভূত হবে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।