বিচারপতি আরভিন্দ কুমার এবং এন.ভি. অঞ্জারিয়ার বেঞ্চ এই আবেদনটিকে গুরুত্ব দিয়ে ২৪ নভেম্বর তারিখে পরবর্তী শুনানির নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশ যেন লাদাখের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রতিধ্বনি রাজ্যত্ব এবং ষষ্ঠ তফসিলের স্বপ্নকে কেন জাতীয় নিরাপত্তার নামে চাপা দেওয়া হচ্ছে? গীতাঞ্জলির এই লড়াই শুধু তার স্বামীর মুক্তির জন্য নয়, বরং গণতান্ত্রিক অধিকারের একটা বড় প্রশ্ন তুলেছে।
সোনাম ওয়াংচুক, যিনি লাদাখের একজন প্রখ্যাত পরিবেশবাদী এবং শিক্ষাবিদ, তাঁর জীবন যেন একটা অনুপ্রেরণার গল্প। সেভেন সামিটসের মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বিশ্বখ্যাত হয়েছেন, কিন্তু তাঁর আসল লড়াই লাদাখের পরিবেশ রক্ষা এবং শিক্ষা সংস্কারে। তিনি স্থানীয় স্তরে কম খরচে স্কুল গড়ে তুলেছেন, যা বিশ্বের নজর কাড়েছে। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে লাদাখে রাজ্যত্ব এবং ষষ্ঠ তফসিলের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যে হঠাৎ ব্যাপক হিংসা ছড়িয়ে পড়ে।
‘মাস্টার ব্লাস্টার’কে টপকে ICC শীর্ষে ‘হিটম্যান’, কী রেকর্ড গড়লেন?
২৪ সেপ্টেম্বর লেহে আন্দশান সাইটে সোনামের ১৫ দিনের অনশন চলাকালীন ভিড় জমে, ভিক্ষুকরা প্রার্থনা করেন, বক্তৃতা হয় কিন্তু পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে চারজনের মৃত্যু এবং ৯০ জনের আহতের ঘটনা ঘটে। এর দু’দিন পর, ২৬ সেপ্টেম্বর, তাঁকে জাতীয় নিরাপত্তা আইন (এনএসএ) অধীনে গ্রেফতার করা হয়।
রাজস্থানের জোধপুর সেন্ট্রাল জেলে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয়, যা লাদাখ থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে। গীতাঞ্জলি বলছেন, এটা শুধু গ্রেফতার নয়, বরং একটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা যাতে তাঁর স্বামীর মতো একজন শান্তিপূর্ণ কর্মীকে চুপ করানো হয়েছে।
গীতাঞ্জলির আবেদন এখন আরও শক্তিশালী হয়েছে। আগের আবেদনে তিনি প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কথা বলেছিলেন যেমন গ্রেফতার ২৮ দিন পর্যন্ত গ্রেফতার কারণ জানানো হয়নি, যা এনএসএ-র নিয়ম লঙ্ঘন। কিন্তু সংশোধিত আবেদনে তিনি মূল কারণগুলোকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। আবেদনে বলা হয়েছে, “সোনামের গ্রেফতার জনসাধারণের শৃঙ্খলা বা নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং তার বিরোধী মত প্রকাশের অধিকারকে দমন করার একটা পরিকল্পিত চক্রান্ত।”
তিনি অভিযোগ করেছেন যে, সোনামকে পাকিস্তান এবং চীনের সাথে যুক্ত করে মিথ্যা প্রচার চালানো হয়েছে, যা তাঁর তিন দশকের পরিবেশ রক্ষা এবং শিক্ষা কাজকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা। “ষষ্ঠ তফসিলের দাবি সংবিধানের প্রতি বিশ্বাসের প্রকাশ, কিন্তু তাকে বিদেশী শক্তির সাথে যুক্ত করে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে,” বলা হয়েছে আবেদনে।
এছাড়া, গ্রেফতারের পর তাঁর স্ত্রীর সাথে নোট বিনিময়ের অনুমতি না দেওয়া, আইনজীবীর সাথে সাক্ষাতের বাধা সবকিছুকে তিনি মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন বলে দাবি করেছেন। কপিল সিব্বালের নেতৃত্বে এই আইনি লড়াই এখন সংবিধানের ১৯ ও ২১ অনুচ্ছেদের অধীনে চলছে।

