কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের মানুষ চিটফান্ড এই শব্দটি শুনলেই শিউরে ওঠে (Tarunjyoti Tiwari SUIM Chit Fund)। সারদা, রোজভ্যালি, অ্যালকেমিস্ট, টাওয়ার গ্রুপ… তালিকা শেষ নেই। লক্ষ লক্ষ পরিবারের রক্ত-ঘামে গড়া টাকা মুহূর্তে উধাও হয়ে গিয়েছিল। ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে যখন মানুষ ভাবছিল অতীতের সেই দুঃস্বপ্ন বোধহয় ভুলে যাওয়া যাবে, ঠিক তখনই বিজেপি নেতা ও আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারির বিস্ফোরক দাবি আবার অস্থির করে তুলল রাজ্যবাসীকে।
তরুণজ্যোতি তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে সতর্ক করেন “পশ্চিমবঙ্গে আবার ফিরে আসছে চিটফান্ড সিন্ডিকেট। নতুন চক্রান্ত শুরু হয়ে গিয়েছে।” তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, রাজ্যে নীরবে মাথা তুলছে পুরনো দিনের প্রতারণার সাম্রাজ্য, আর এর সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন শাসক দলের নেতা।
ইজরায়েলি LMG দিয়ে সজ্জিত হবে ভারতীয় সেনা, ৭.৬২ মিমি ‘লাইট মেশিনগান’ সরবরাহ করবে IWI
তরুণজ্যোতি উল্লেখ করেন, বাম আমলের শেষ দিকে I-Core–এর মতো বহু চিটফান্ড সংস্থা গজিয়ে উঠেছিল, যারা তখনকার সরকার ও নেতাদের আশীর্বাদে ফুলে–ফেঁপে উঠেছিল। এরপর তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর সারদা–রোজভ্যালি–গ্রীন রেজ—অসংখ্য প্রতারণা সংস্থা সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে নেয়। তাঁর অভিযোগ “প্রতিটি বড় চিটফান্ডের বিজ্ঞাপনে দেখা যেত তৃণমূল নেতাদের হাসিমুখ। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এত বড় প্রতারণা সম্ভব ছিল না।”
এবার লক্ষ্যবস্তু SUIM গ্রুপ। ২০২৫ সালে নিবন্ধিত হওয়া চারটি কোম্পানি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তরুণজ্যোতি SUIM এ কমার্স প্রাইভেট লিমিটেড, SUIM প্রোডাকশন ইন্ডাস্ট্রি, SUIM সার্ভিসেস ইন্ডাস্ট্রি এবং SUIM এন্টারটেইনমেন্ট। এই কোম্পানিগুলো তাঁর দাবি অনুযায়ী, একদম পুরনো money-market fraud model-এ কাজ করছে।
তরুণজ্যোতির মতে এই কোম্পানি গুলির একই স্টাইল যেমন, বিশাল এজেন্ট নেটওয়ার্ক, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অস্বাভাবিক টাকা সংগ্রহ, অবৈধ আর্থিক প্রতিশ্রুতি এবং জেলা–জেলা ঘুরে নেটওয়ার্ক তৈরি। আরও গুরুতর অভিযোগ শাসক দলের অফিসে বৈঠক! তরুণজ্যোতির মতে, SUIM–এর একাধিক বৈঠক তৃণমূলের বিভিন্ন পার্টি অফিসে হয়েছে। তাঁর দাবি আরও চমকে দেওয়ার মতো। অডিও রেকর্ডিংয়ে বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতার নাম উঠে এসেছে।
তরুণ জ্যোতি অভিযোগ করেছেন মলয় ঘটকসহ একাধিক জেলা নেতা জড়িত। কিছু অডিওতে অভিষেক ব্যানার্জীর নামও উচ্চারিত হয়েছে। কিছু সভায় তৃণমূল নেতারা সরাসরি মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। তরুণজ্যোতির ভাষায় “এটা আর পাঁচটা ছোটখাট প্রতারণা নয়। মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে পড়েছে গোটা রাজ্যে।”
তরুণজ্যোতি দাবি করেছেন, তাঁর হাতে রয়েছে কোম্পানির নথিপত্র, টাকা তোলার স্কিম, সভার ছবি ও ভিডিও, অডিও রেকর্ডিং, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার প্রমাণ এবং সংশ্লিষ্ট নেতাদের নামের তালিকা। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন “সব নথি খুব শিগগিরই জনসমক্ষে আনা হবে।
আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” সারদা–রোজভ্যালির ক্ষত আজও শুকায়নি। সেই ঘটনার পর বহু পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছে। তাঁদের চোখে আজও ভয়, ক্ষোভ ও হতাশা লুকিয়ে আছে। এই অবস্থায় নতুন করে চিটফান্ড চক্র গজিয়ে ওঠার খবর মানুষের উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে।
তরুণজ্যোতির কথায় “পশ্চিমবঙ্গ আরেকটা চিটফান্ড কেলেঙ্কারি সহ্য করতে পারবে না। এবার মানুষ প্রস্তুত।” তিনি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন “যে–ই হোক, যত বড় নেতা–ই হোক—চিটফান্ড সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকলে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে।” রাজনীতির অন্দরমহলে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল কী প্রতিক্রিয়া জানায়, সেটাই এখন দেখার।
