SSC র দাগি তালিকায় ফের ফাঁস মমতা পরিবারের দুর্নীতি

ssc-scam-mamata-banerjee-cousin-bristi-mukherjee-job-list

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের বহুল আলোচিত শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির (SSC Scam) কাহিনি যেন শেষ হওয়ার নামই নিচ্ছে না। গতকাল SSC র তরফ থেকে প্রকাশ হয়েছে গ্রুপ C এবং গ্ৰুপ D এর দাগি তালিকা। এবার সামনে এল এমন এক অভিযোগ, যা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে রীতিমতো চাঞ্চল্য তৈরি করেছে। বিজেপি নেতা ও আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি তার এক্স হ্যান্ডেলের পোস্টে বিস্ফোরক দাবি করেছেন “চাকরি চোরদের তালিকায় মুখ্যমন্ত্রীর মামাতো ভাইয়ের মেয়েও আছেন!”

Advertisements

তরুণজ্যোতি তিওয়ারির দাবি অনুযায়ী, আজ পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) প্রকাশ করেছে Group C ও Group D-র অবৈধ নিয়োগ পাওয়া প্রার্থীদের তালিকা। সেই তালিকায় ৬৭৪ নম্বর নামটি বিশেষভাবে নজর কেড়েছে। অভিযোগ, ওই প্রার্থীর নাম বৃষ্টি মুখার্জি, যিনি নাকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামাতো ভাইয়ের মেয়ে।

   

এবার ঘরে বসেই আধার কার্ড সংশোধন, UIDAI-এর নতুন অ্যাপে সব সম্ভব!

তালিকা অনুযায়ী, বৃষ্টি মুখার্জি OMR শিটে পেয়েছিলেন মাত্র ৭ নম্বর, অথচ “মুখ্যমন্ত্রীর আশীর্বাদে” সেই নম্বর বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৫৩। ফলে এত দিন ধরে তিনি চাকরি করছিলেন। বিজেপি নেতার অভিযোগ, “এতটা অলৌকিক পরিবর্তন সবার ভাগ্যে জোটে না কারণ উনি মুখ্যমন্ত্রীর আত্মীয়া।”

এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই শাসকদল ও বিরোধী শিবিরে উত্তেজনা তুঙ্গে। বিজেপি মুখপাত্রদের দাবি, এই ঘটনা স্পষ্ট প্রমাণ করে যে, “তৃণমূল কেবলমাত্র টাকার বিনিময়ে চাকরি বিক্রি করেনি, বরং আত্মীয়স্বজনকেও অবৈধভাবে চাকরি দিয়েছে।” এক বিজেপি নেতা বলেন, “যে মুখ্যমন্ত্রী নিজেকে ‘সততার প্রতীক’ বলে দাবি করেন, আজ তার নিজের পরিবারের নাম দুর্নীতির লিস্টে। এটা নৈতিক দেউলিয়াত্বের চূড়ান্ত উদাহরণ।”

অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক চক্রান্ত’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। দলের মুখপাত্র জানান, “বিজেপি এখন আদালতের বিষয়কেও রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। কমিশনের লিস্টে কারও নাম থাকা মানেই অপরাধ প্রমাণ নয়। বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে এমন কুৎসা ছড়ানো অনৈতিক।”

Advertisements

তবে জনমানসে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠছে এত বড় একটি দুর্নীতি কিভাবে এত দীর্ঘ সময় ধরে চলল? কে বা কারা এই চক্রের মূলচক্রী? SSC নিয়োগ কেলেঙ্কারি ইতিমধ্যেই রাজ্যের রাজনীতিতে এক কালো অধ্যায় হয়ে উঠেছে। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখন জেলে। তরুণজ্যোতি তিওয়ারি আরও লিখেছেন, “এই লিস্ট কোর্টে জমা আছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই আরও বড় বড় নাম সামনে আসবে। জনগণের আদালত এখন প্রস্তুত চাকরি চোরদের বিচারের জন্য।”

রাজনীতির ময়দানে এই নতুন বিস্ফোরণ ঠিক এমন সময় এল, যখন রাজ্য সরকার চেষ্টা করছে SSC মামলার ক্ষতিপূরণমূলক নিয়োগ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর আত্মীয়ের নাম ওঠায় সেই প্রচেষ্টা আবারও প্রশ্নের মুখে। রাজনীতির পাশাপাশি সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়াও তীব্র।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন তরুণ প্রজন্ম। কেউ লিখছেন, “যদি মুখ্যমন্ত্রীর ঘরের মধ্যেও দুর্নীতির ছায়া থাকে, তাহলে আর সাধারণ চাকরিপ্রার্থী কোথায় যাবে?” কেউ বা বলছেন, “এটাই প্রমাণ করছে, যোগ্যতা নয়, সম্পর্কই এখন চাকরির চাবিকাঠি।”

এই ঘটনার পর এখন নজর আদালতের দিকে। কমিশন ও CBI কীভাবে এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে, সেটাই দেখার বিষয়। কিন্তু একথা অনস্বীকার্য — SSC দুর্নীতি যে কেবল প্রশাসনিক নয়, এখন তা নৈতিক ও পারিবারিক সীমা ছাড়িয়ে রাজনৈতিক মহাসমীকরণে পরিণত হয়েছে।