Monday, December 8, 2025
HomeWest BengalKolkata Cityবিকাশ ভবনের সামনে ফের চাকরি প্রার্থীদের বিক্ষোভ

বিকাশ ভবনের সামনে ফের চাকরি প্রার্থীদের বিক্ষোভ

- Advertisement -

বিকাশ ভবনের সামনে সোমবার বিকেল থেকেই তৈরি হয় উত্তেজনার আবহ (SSC job aspirants protest)। স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেই আবারও পথে নামেন একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষকপদপ্রার্থী চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের প্রধান দাবি—অভিজ্ঞতার ১০ নম্বর বাতিল, সকলের OMR শিট প্রকাশ, এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা। কিন্তু দাবি জানাতেই বিপত্তি। পুলিশের বক্তব্য, বিক্ষোভের কোনও অনুমতি ছিল না। আর সেই কারণেই সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয় ধুন্ধুমার পরিস্থিতি।

দুপুর থেকেই বিকাশ ভবনের সামনে চাকরিপ্রার্থীরা জড়ো হয়ে স্লোগান তুলছিলেন—“ন্যায্য চাকরি চাই”, “দুর্নীতি চলবে না”, “স্বচ্ছ নিয়োগ চাই”—এইসব দাবিতে মুখর হয় গোটা এলাকা। তাঁদের মতে, একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও সরকার বা কমিশন কারও পক্ষ থেকেই কোনও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া না আসায় বাধ্য হয়েই তাঁরা পথে নামছেন বারবার।

   

কিন্তু বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই পরিস্থিতির মোড় ঘুরে যায়। অভিযোগ উঠেছে, কোনওরকম সতর্কতা ছাড়াই পুলিশ রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়ে বিক্ষোভকারীদের উপর। ভিডিওতে দেখা যায়, একাধিক চাকরিপ্রার্থীকে টেনে হিঁচড়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিচ্ছেন পুলিশকর্মীরা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত শিক্ষকরা জানিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে “অমানুষিক” আচরণ করা হয়েছে।

এক বিক্ষোভকারী শিক্ষক ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “আমাদের সঙ্গে অমানুষের মতো আচরণ করেছে পুলিশ। আমরা তো শুধু ন্যায্য চাকরি চাইতে এসেছি। এভাবে আমাদের টেনে হিঁচড়ে সরিয়ে দেওয়া হবে কেন?” আরেকজন প্রশ্ন তোলেন, “কী দোষ আমাদের? OMR শিট চাইতে এসেছি, স্বচ্ছ নিয়োগ চাইতে এসেছি। এটা কি অন্যায়?”

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অনুমতি ছাড়া সরকারি দফতরের সামনে জমায়েত করায় এবং হঠাৎ পথ অবরোধ করায় তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যেই কমপক্ষে একজন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। তবে চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, তাঁরা কোনও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেননি। বরং তাঁদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভই শক্তি প্রয়োগ করে ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, বিকাশ ভবন থেকে বিক্ষোভকারী সরানো হলেও, সেন্ট্রাল পার্ক মেট্রো স্টেশনে এখনও অবস্থান করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা। তাঁদের দাবি, নিয়োগ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা লড়াই চালিয়ে যাবেন। তাঁদের বক্তব্য এটা শুধু চাকরির লড়াই নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার গুণগত মান রক্ষারও লড়াই।

চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের অভিযোগ, বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কর্তৃপক্ষ কোনও প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অভিজ্ঞতার নম্বর নিয়ে তাঁদের প্রশ্ন কীভাবে এই নম্বর বণ্টন করা হচ্ছে, কে যাচাই করছে, এবং কতটা ন্যায্য ভাবে প্রার্থীদের বিচার করা হচ্ছে এসব বিষয়ে কোনও স্পষ্টতা নেই। পাশাপাশি তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, অভিজ্ঞতা নম্বরের দোহাই দিয়ে প্রকৃত যোগ্যদের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

ঘটনার পরে রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে আলোচনা। বিরোধী শিবির ইতিমধ্যেই অভিযোগ তুলেছে যে, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই পুলিশি দমন নেমে আসে। সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

তবে চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, এই আচরণের বিরুদ্ধে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হবেন। একজন সিনিয়র চাকরিপ্রার্থী বলেন, “মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ধরে আমরা লড়াই করছি। পরিবার, সমাজ, চাকরি সব দিক সামলে এই লড়াই চালাতে হচ্ছে। অথচ আমাদের সঙ্গে আচরণ করা হচ্ছে অপরাধীর মতো।”

বিকাশ ভবনের সামনের এই বিশৃঙ্খলা আবারও মনে করিয়ে দিল SSC নিয়োগ নিয়ে তৈরি হওয়া প্রশ্নগুলিকে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা, এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ কি সত্যিই হচ্ছে? নাকি বারবার আন্দোলন করে, লাঞ্ছিত হয়ে নিজেদের প্রাপ্য দাবি তুলে ধরতে হবে? এই ঘটনার পর স্পষ্ট চাকরিপ্রার্থীদের লড়াই এখনও শেষ হয়নি।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular