প্রাক্তন মেয়রের ঘর ওয়াপসি নিয়ে জল্পনা উস্কাল ঘাসফুল শিবির

sovan-chatterjee-trinamool-comeback-2025

কলকাতা: রাজ্য রাজনীতির আঙিনায় ফের তীব্র জল্পনা। দীর্ঘ রাজনৈতিক বিরতির পর, আজই কি ঘর ওয়াপসি করতে চলেছেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র ও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন হেভিওয়েট নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়? সূত্রের খবর, সোমবার বিকেল ৩টেয় তৃণমূল ভবনে একটি সাংবাদিক বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানেই নাকি ঘোষণা হতে পারে শোভন-বৈশাখীর তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন।

Advertisements

গতকাল থেকেই জল্পনা তুঙ্গে। তৃণমূল সূত্রে খবর, রবিবার রাতেই শোভন-বৈশাখীর কাছে দলে যোগদানের বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়। সেই সূত্রে আজকের এই বৈঠক ঘিরে প্রত্যাশা আকাশছোঁয়া। এক্স-হ্যান্ডেলে তৃণমূলের অফিসিয়াল পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে, “আজ বিকেল ৩টেয় তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক। সুব্রত বক্সী ও অরূপ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে ঘোষণা হবে এক হেভিওয়েট যোগদানের।” আর সেই “হেভিওয়েট” যে শোভন চট্টোপাধ্যায় হতে পারেন, তা নিয়ে প্রায় নিশ্চিত রাজনৈতিক মহল।

   

তৃণমূলের রাজনীতিতে একসময় অত্যন্ত প্রভাবশালী মুখ ছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন তিনি। কিন্তু ২০১৯ সালে নানা মতভেদের কারণে দল ছাড়েন এবং বিজেপিতে যোগ দেন। তবে বিজেপিতে যোগ দিলেও সক্রিয়ভাবে তেমন ভূমিকা নেননি। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়েও দলে অসন্তোষ দেখা দেয়। অবশেষে দুজনেই ধীরে ধীরে রাজনৈতিক অন্দরে নীরব হয়ে যান।

কিন্তু কয়েক সপ্তাহ ধরেই যেন সবকিছু বদলে যেতে শুরু করেছে। প্রথমে ২৫ সেপ্টেম্বর তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কালীঘাটে তাঁর বৈঠক। প্রায় তিন ঘণ্টার দীর্ঘ আলোচনা হয় তাঁদের মধ্যে। যদিও সেই বৈঠকের বিষয়বস্তু প্রকাশ্যে আসেনি, শোভন নিজেই জানিয়েছিলেন “আমি তৃণমূলের হয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে চাই।” এরপরই এনকেডিএ চেয়ারম্যান পদে তাঁর নিযুক্তি  যা কার্যত কামব্যাকের ইঙ্গিত দিয়েছিল।

এরপর আরও বড় ইঙ্গিত মেলে অক্টোবরে। উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন দার্জিলিং সফরে ছিলেন, তখন শোভন-বৈশাখীও সেখানে পৌঁছে যান। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের দীর্ঘ বৈঠক হয়। যদিও কে কাকে ডাকলেন, তা স্পষ্ট হয়নি, কিন্তু রাজনৈতিক মহল তখনই বুঝেছিল বরফ গলছে।

Advertisements

আজকের তৃণমূল ভবনের বৈঠক ঘিরে তাই উত্তেজনা চরমে। তৃণমূলের ভেতরেও গুঞ্জন, ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে দলের পুরনো ও অভিজ্ঞ সৈনিকদের ফিরিয়ে আনার কৌশল নিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন প্রেক্ষাপটে, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ঘাসফুলে ফেরাটা নিঃসন্দেহে তৃণমূলের কাছে এক বড় রাজনৈতিক বার্তা হতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শোভনের কামব্যাক কেবল প্রতীকী নয়, বরং এটি কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা অঞ্চলে দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতেও সাহায্য করবে। শোভন-বৈশাখীর জনপ্রিয়তা ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা দলের ভোটব্যাঙ্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, বিজেপি শিবিরে এই জল্পনা নিয়ে অস্বস্তি স্পষ্ট। তাঁদের মতে, “যে ব্যক্তি একসময় দল ছেড়ে গিয়েছিলেন, এখন ভোটের আগে ফের ঘাসফুলে ফেরা মানে তৃণমূলের ভিত নড়বড়ে।” তবে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, শোভনের প্রত্যাবর্তন আসলে মমতার কৌশলগত পদক্ষেপ যাতে আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে দলকে সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করা যায়। তাই প্রশ্ন একটাই আজ বিকেল তিনটেয় কি সত্যিই বাজবে শোভনের ঘর ওয়াপসির ঢাক? না কি এই জল্পনা থেকেই যাবে আলোচনার বিষয়? সময়ই দেবে উত্তর।