কলকাতা: দার্জিলিং পাহাড়ে ফের জমে উঠেছে রাজনৈতিক প্রহসন। বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে হঠাৎই দেখা করলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। দীর্ঘ প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে মুখ্যমন্ত্রী বাসভবনে হয় বৈঠক, যা ঘিরে নতুন করে জল্পনা তৈরি হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। সঙ্গে ছিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর মেয়ে, যদিও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক হয় শুধুমাত্র শোভনের।
শোনা যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী ও প্রাক্তন মেয়রের মধ্যে কেবল সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়, রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়েও হয়েছে কথাবার্তা। এর আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও দীর্ঘ বৈঠক করেছিলেন শোভন। ফলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এবার তাঁর ঘরে ফেরার পথ একপ্রকার তৈরি।
২০১৯ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়ে একসময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করেছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক বেশিদিন টেকেনি। ক্রমে দূরত্ব বাড়তে থাকে, আর ঘনিয়ে আসে পুরনো দিদির দল। ভাইফোঁটার দিন কালীঘাটে মমতার বাড়িতে হাজির হওয়া থেকে শুরু করে নবান্নে সাক্ষাৎ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্কের বরফ গলেছে অনেকটা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মমতা-শোভন সম্পর্ক বরাবরই ছিল ব্যক্তিগত সৌহার্দ্যপূর্ণ। মুখ্যমন্ত্রীর ‘কিচেন ক্যাবিনেট’-এর অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। মেয়র হিসেবে কলকাতার প্রশাসনিক কাজ থেকে শুরু করে রাজ্য মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বেও ছিলেন শোভন। তাই তাঁর প্রত্যাবর্তন হলে তা তৃণমূলের জন্য বড় রাজনৈতিক বার্তা বহন করবে।
গতকাল বিকেলে দার্জিলিঙের রিচমন্ড হিলে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিত সূত্র জানাচ্ছে, হাসি-মজা, আড্ডা সবকিছুর মাঝেই রাজনীতি ছিল মূল আলোচ্য। শোনা যাচ্ছে, শোভন চট্টোপাধ্যায় আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে কাজ করতে আগ্রহী। দলের পক্ষ থেকেও নাকি ইতিবাচক সাড়া মিলেছে।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের পর শোভনের বক্তব্যই যেন ইঙ্গিত দিয়েছিল এই সম্ভাবনার— “যা আলোচনা হয়েছে তাতে মনে করি, ওই মেঘ থেকে জল আসবে। অভিষেকের উষ্ণতাও উপলব্ধি করেছি। মমতাদি নিশ্চয়ই আমাকেও ডাকবেন। আমি নিজেকে প্রস্তুত রাখছি।”
বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছেন, “আজকের দিনটা আমার কাছে স্মরণীয়। অভিষেক ও শোভনের আন্তরিকতা আমাকে অভিভূত করেছে। ভুল ধারণা কেটে গেছে, সময়ের অপেক্ষা মাত্র।” এই বক্তব্যগুলিই যেন আরও জোরালো করছে ঘরে ফেরার সম্ভাবনা। রাজনৈতিক মহলের দাবি, শোভনের তৃণমূলে ফেরা এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা। সামনে ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোট, এবং তৃণমূলের পুরনো সৈনিকদের পুনরায় একত্রিত করতেই নাকি মমতার এই কৌশল।
দীর্ঘ রাজনৈতিক বিরতি কাটিয়ে কি তবে আবার রাজ্য রাজনীতির মূল মঞ্চে ফিরতে চলেছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়? উৎসবের আবহে পাহাড়ে দিদি-শোভনের এই সাক্ষাৎ যে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য। এখন অপেক্ষা, কবে ঘোষণা হবে “ঘরে ফেরা”-র আনুষ্ঠানিক সিলমোহর।