কলকাতা, ১ ডিসেম্বর: পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন প্রক্রিয়া (South 24 Parganas SIR voter list) ঘিরে যখন অভিযোগ-প্রতিবাদের ঝড় বইছে, তখনই আরও এক বিস্ফোরক দাবি তুলে ধরলেন বিজেপি নেতা ও বিশিষ্ট আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি। তাঁর বক্তব্য রাজ্যের ২,২০৮টি বুথে নাকি একজনও মৃত ভোটারের নাম পাওয়া যায়নি! আর এই আশ্চর্য পরিসংখ্যানের শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা।
তরুণজ্যোতির এক্স পোস্টটি মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। তাঁর লেখা, “২৩ বছরে অমরত্ব লাভে এগিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মানুষ! শেষ SIR হয়েছিল ২০০২ সালে। তাহলে ২০০২ থেকে ২০২৫ ২৩ বছরে একজনও মারা যায়নি? সবাই কি অমর হয়ে গেছে?” এই বক্তব্যে ব্যঙ্গ যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা নিয়েও গভীর প্রশ্নও।
মাঠে নয়, ডাগআউটে! কোন দায়িত্বে ফিরছেন নাইটদের পাওয়ার হিটার?
পোস্টে তরুণজ্যোতি আরও লিখেছেন, “রাজ্যের ২,২০৮টা বুথে নাকি একজনও মৃত ভোটার নেই! সব ফর্ম ফেরত এল! শীর্ষে দঃ ২৪ পরগনা বাহবা!” সাধারণত SIR-এর মূল উদ্দেশ্য হলো মৃত ভোটারদের নাম বাদ দিয়ে, নতুন ভোটার যুক্ত করা এবং ভুয়ো ভোটারদের সনাক্ত করা। কিন্তু যেখানে বিশাল জনসংখ্যাবিশিষ্ট একটি জেলা ২৩ বছরে একজনও মৃত ভোটার চিহ্নিত করতে না পারে, তা প্রশাসনিকভাবে কতটা স্বাভাবিক এই প্রশ্নই এখন ঘুরছে রাজনৈতিক মহলে।
তরুণজ্যোতি ব্যঙ্গ করে বলেন “ দঃ ২৪ পরগনায় অমরত্বের ফ্রি কোচিং চলছে?” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি কার্যত প্রশ্ন তুলেছেন, SIR প্রক্রিয়া পরিচালনায় BLO (Booth Level Officer)-দের ভূমিকা কতটা সঠিক ছিল এবং তাঁরা কি ইচ্ছাকৃতভাবে মৃত ভোটারদের তথ্য ‘অনুপস্থিত’ দেখিয়েছেন? আরও কটাক্ষ করে তিনি লিখেছেন, “BLO-রা দয়া করেছে বলে ভোটারেরাও বোধহয় শাকে-ভাতে বেঁচে আছে! কেউ মারা গেলে তো জানাতে হবে, তাই সবাই ‘জীবিত’ থাকার অভিনয় করছে!”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই মন্তব্য সরাসরি ভোটার তালিকা পরিচালনায় স্বচ্ছতার অভাবকে লক্ষ্য করে। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ বহুদিনের। তাদের মতে রাজ্যের ভোটার তালিকায় মৃত ভোটারের সংখ্যা যথেষ্ট বেশি, ভুয়ো নাম অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, SIR ফর্ম অনেক জেলায় ‘টেনে-হিঁচড়ে’ ক্লিনচিট দেওয়া হচ্ছে এবং BLO-দের উপর ‘চাপ’ সৃষ্টি করে স্বচ্ছতা বিঘ্নিত করা হচ্ছে। তরুণজ্যোতির পোস্ট সেই অভিযোগকেই আরও উসকে দিয়েছে।
তৃণমূলের দাবি বিরোধীরা অযথা রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুঁড়ি করছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা বড় জেলা, সেখানে SIR প্রক্রিয়া অত্যন্ত দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত হয়েছে বলেই মৃত ভোটার ‘নেই’ এমন রিপোর্ট এসেছে।
তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে “বিজেপির কাজ শুধু বিভ্রান্তি ছড়ানো।”
কিন্তু এখানেই বড় প্রশ্ন কোনও জনবহুল জেলায় ২৩ বছরে একজনও মৃত ভোটার নেই কি সত্যি সম্ভব? BLO-রা কি সঠিক রিপোর্ট দিয়েছেন? নির্বাচন কমিশন কি সব তথ্য খতিয়ে দেখবে? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দাবি যদি সত্যি হয় তাহলে তা প্রশাসনিকভাবে অভূতপূর্ব; আর যদি ভুল হয়ে থাকে, তাহলে তা অতি গুরুতর গাফিলতি।
তরুণজ্যোতি শেষে আরও তির্যক মন্তব্য করেন “বাংলায় নতুন অলৌকিকতা: ভোটার লিস্টে সবাই অমর শুধু রাজ্যটাই মরছে!” বক্তব্যটি যেমন ব্যঙ্গাত্মক, তেমনই স্পষ্টভাবে শাসকদলের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ রাজ্যের প্রশাসনিক কাঠামো কার্যত ভেঙে পড়ছে। SIR নিয়ে এই নতুন বিতর্কে চড়া সুরে রাজনৈতিক লড়াই আরও তীব্র হওয়ারই ইঙ্গিত।
