নয়াদিল্লি, ১ ডিসেম্বর: সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনই আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু SIR। নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন (SIR) প্রক্রিয়া নিয়ে বিরোধী দলগুলোর ক্ষোভ ফেটে পড়েছে, এবং এর মধ্যে সিপিআই(এম)-এর সাংসদ আমরা রামের বিস্ফোরক বক্তব্য যেন আগুনে ঘি ঢেলেছে। রাজ্যসভায় তাঁর স্পষ্ট শব্দে বলা হয়েছে, “বিদেশী অনুপ্রবেশকারীর নামে হয়রানির কারণে প্রত্যেক রাজ্যে BLO রা মারা যাচ্ছেন। কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
তিনি আরও বলেন SIR-এর মাধ্যমে বিরোধী দলের ভোট কেটে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে… দেশের সংবিধানের সবচেয়ে বড় অধিকার হলো সকলের সমান ভোটাধিকার, ধনী হোক বা দরিদ্র।” এই বক্তব্য শুধু একজন সাংসদের ক্ষোভ নয়, বরং গণতান্ত্রিক স্বাস্থ্যের উপর গভীর আঘাতের প্রতিফলন। অধিবেশন শুরুর আগেই গত রবিবারের অল-পার্টি মিটিংয়ে এই বিষয়টি প্রধান আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে, যেখানে কংগ্রেস, সামাজওয়াদী পার্টি, তৃণমূল কংগ্রেস, ডি এমকে সহ ৩৬টি দলের প্রতিনিধিরা একযোগে আলোচনার দাবি জানিয়েছে।
‘BLOদের প্রশিক্ষণ কেন দেওয়া হয়নি?’ হুঁশিয়ারি অভিষেকের
SIR-এর পটভূমি খুবই জটিল এবং বিতর্কিত। নির্বাচন কমিশনের এই বিশেষ সংশোধন প্রক্রিয়া ২০২৫ সালের শুরু থেকে বিভিন্ন রাজ্যে চালু হয়েছে, যার উদ্দেশ্য বলা হচ্ছে ভোটার তালিকা থেকে জাল বা অবৈধ নামগুলো সরানো। কিন্তু বিরোধীরা এটাকে ‘ভোটার শুদ্ধিকরণের নামে রাজনৈতিক হাতিয়ার’ বলে অভিহিত করছে। বিশেষ করে বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে, যেখানে লক্ষাধিক ভোটারের নাম কাটা হয়েছে বলে অভিযোগ।
আমরা রামের কথায়, এই প্রক্রিয়ায় BLO-রা (বুথ লেভেল অফিসার) চাপের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করছেন। গত কয়েক মাসে অন্তত ২০-এর বেশি BLO-এর আত্মহত্যার ঘটনা রিপোর্ট হয়েছে, যা প্রশাসনের উপর গুরুতর অভিযোগ তুলেছে। সামাজওয়াদী পার্টির নেতা রামগোপাল যাদব বলেছেন, “যদি SIR নিয়ে আলোচনা না হয়, তাহলে সংসদ চালানো অসম্ভব। এটা লক্ষ লক্ষ ভোটারের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত।” কংগ্রেসের জয়রাম রমেশও এতে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, “এটা নির্বাচনী সংস্কারের অংশ হিসেবে আলোচনা করতে হবে, না হলে অধিবেশন বাধাগ্রস্ত হবে।”
আমরা রামের বক্তব্যের মানবিক দিকটি সবচেয়ে হৃদয়স্পর্শী। তিনি একজন শ্রমিক নেতা হিসেবে পরিচিত, যিনি শ্রমিকদের অধিকারের জন্য লড়াই করে আসছেন। তাঁর কথায়, SIR শুধু ভোটার তালিকা সংশোধন নয়, বরং দরিদ্র, প্রান্তিক মানুষের গলা আড়াল করার চেষ্টা। “যারা দশকের পর দশক ধরে একই জায়গায় বাস করে, তাদের ভোট কাটা হচ্ছে বিদেশী বলে চিহ্নিত করে। এটা সংবিধানের মূল চেতনার বিরোধী,” বলেছেন তিনি।
