হিঙ্গলগঞ্জ: SIR করতে দেওয়া হবে না। এই দাবিতে আজ রাস্তায় নেমেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। কিন্তু রাজ্যে চলছে বেলাগাম অনুপ্রবেশ। SIR আবহে হিঙ্গলগঞ্জে মিলল এমনই খবর। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্তের নাম নাজমুল গাজি। তিনি বাংলাদেশ থেকে বেআইনি পথে ভারতে প্রবেশ করেন কয়েক বছর আগে।
এখানে এসে তিনি এক মুসলিম মহিলাকে বিয়ে করেন এবং সেই বিয়ের নথি ব্যবহার করে নিজের শ্বশুরের নামকে নিজের পিতার নাম হিসেবে দেখিয়ে ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করেন। বর্তমানে তিনি হিঙ্গলগঞ্জে মিস্ত্রির কাজ করেন এবং সরকারি ভোটার তালিকায় তাঁর নামও রয়েছে! এই ঘটনার পর স্থানীয় মানুষ এবং প্রশাসনের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। স্থানীয়দের বক্তব্য, “আমরা জানতাম লোকটা বাংলাদেশ থেকে এসেছে, কিন্তু এখন তো ভোটার কার্ডও হয়ে গেছে! তাহলে সীমানা রক্ষার মানে কী?”
স্মৃতি-হরমনপ্রীতদের কাণ্ডে বিরাট-রোহিতকে খোঁচা দিয়ে ‘বিস্ফোরক’ এই তারকা
অন্যদিকে, এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিরোধী দল বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেছে, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ রাস্তায় নেমে SIR এর বিরোধিতা করছেন, অথচ তাঁর রাজ্যে প্রতিদিন বেআইনি অনুপ্রবেশকারীরা নাগরিক সনদ পাচ্ছেন। এটা প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, এটা রাজনৈতিক ছাড়।” বিজেপি আরও বলেছে যে এই ধরণের অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বাচানোর জন্যই আজকের এই রাস্তায় নেমে বিরোধিতা।
রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব বলেছেন , “SIR করলে সত্যিটা সামনে আসবে তাই তৃণমূল ভয় পাচ্ছে। আজ হিঙ্গলগঞ্জের নাজমুল গাজি তার বড় প্রমাণ। সে শুধু একজন নয়, হাজার হাজার এমন বাংলাদেশি আজ ভোটার তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলেছে, কারণ তারা তৃণমূলের ‘ভোটব্যাঙ্ক’। এই রাজ্যকে ধীরে ধীরে নাগরিক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।”
তবে তৃণমূল কংগ্রেস পাল্টা সুরে বলেছে, বিজেপি নাগরিকত্ব ইস্যুতে ভয় দেখাচ্ছে। দলের মুখপাত্রের বক্তব্য, “SIR মানে আসলে গোপনে NRC চালু করা। আমরা চাই না বাংলার মানুষ আবার NRC আতঙ্কে ভোগুক। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার দায় পুরো সম্প্রদায়ের ওপর চাপানো যাবে না।”
তবে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও আশঙ্কা বাড়ছে। এক শিক্ষক বলেন, “যদি সত্যিই কেউ বিদেশ থেকে এসে এমনভাবে নথি বানাতে পারে, তাহলে প্রশাসনের ওপর আমাদের বিশ্বাস কোথায় থাকবে? আবার SIR-এর নামে বৈধ নাগরিকদের হয়রানি হলে তার দায় কে নেবে?”
হিঙ্গলগঞ্জের এই ঘটনা এখন রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থার ওপর সরাসরি প্রশ্ন তুলছে। সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (BSF) জানিয়েছে, “বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশ আটকাতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক। তবে স্থানীয় নথি জালিয়াতি হলে সেটি রাজ্য প্রশাসনের দায়িত্ব।” বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি কেবল প্রশাসনিক দুর্বলতা নয়, বরং একটি গভীর সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকট।
অনুপ্রবেশের সঙ্গে ভোট রাজনীতি ও নাগরিক যাচাই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা একসঙ্গে মিলে তৈরি করছে এক জটিল বাস্তবতা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ কলকাতার মিছিলে বলেন, “SIR হল সাধারণ মানুষের তথ্য জোগাড়ের নাম করে গোপনে NRC। আমরা তা হতে দেব না।” তবে রাজ্যের অন্য প্রান্তে নাজমুল গাজির মতো উদাহরণ সামনে আসায় সরকারের বক্তব্যের সত্যতা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে।


