বেঙ্গালুরু: কর্নাটকে শিক্ষাদফতরের সাম্প্রতিক এক সার্কুলার নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। রাজ্যজুড়ে বিরোধীরা যেখানে অভিযোগ তুলছে, এই নির্দেশিকা আরএসএস-বিরোধী মনোভাবের প্রতিফলন, সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া দাবি করেছেন বিষয়টি সম্পূর্ণ ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, “আমাদের সার্কুলারটি কোনও নির্দিষ্ট সংগঠনের বিরুদ্ধে নয়, বরং এটি আগের সরকারের জারি করা নির্দেশিকার পুনরাবৃত্তি মাত্র।”
সোমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সিদ্দারামাইয়া বলেন, “২০১৩ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জগদীশ শেট্টার নেতৃত্বাধীন সরকারও একইরকম একটি সার্কুলার জারি করেছিল। এখন আমরা সেই সিদ্ধান্তকেই পুনরায় উল্লেখ করেছি। এতে আরএসএস বা অন্য কোনও সংগঠনের নাম উল্লেখ নেই।”
মাত্র ৮,০০০ টাকায় সেরা চার ৫জি স্মার্টফোন, এমন ছাড় আর পাবেন না!
এই মন্তব্যের পর রাজ্য রাজনীতিতে নয়া মাত্রা যোগ হয়েছে। বিজেপি অভিযোগ করছে, সিদ্দারামাইয়া সরকারের এই পদক্ষেপ আসলে আরএসএস-এর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ার প্রচেষ্টা। বিজেপি নেতা ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বোম্মাই বলেছেন, “সিদ্দারামাইয়া সবসময় আরএসএস-বিরোধী রাজনীতি করেছেন। এবার তিনি সরকারি দফতরের মাধ্যমে তা প্রয়োগ করতে চাইছেন।”
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর দাবি একেবারে উল্টো। তিনি বলেন, “আমরা কেবল এটুকুই বলেছি যে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনও সংগঠন তার রাজনৈতিক বা মতাদর্শিক কার্যক্রম চালাতে পারবে না। এটি সম্পূর্ণ প্রশাসনিক পদক্ষেপ, রাজনৈতিক নয়।” বিশ্লেষকরা বলছেন, কর্নাটকে এই বিতর্ক অনেক গভীরে প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ রাজ্যের শিক্ষাঙ্গন বহুদিন ধরেই রাজনৈতিক প্রভাবের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। সরকার ও বিরোধী শিবির উভয়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে নিজেদের মতাদর্শ প্রচারের জায়গা হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।
একজন শিক্ষা বিশেষজ্ঞ বলেন, “এই সার্কুলারের উদ্দেশ্য যদি নিরপেক্ষ হয়, তবে সেটি স্বাগতযোগ্য। কিন্তু যদি বাস্তব প্রয়োগে কোনও নির্দিষ্ট সংগঠনকে টার্গেট করা হয়, তাহলে সেটি প্রশ্নের মুখে পড়বে।”
এই ঘটনায় কর্নাটক রাজনীতি আরও একবার প্রমাণ করছে, শিক্ষা ও মতাদর্শের সংঘাত এখানকার নির্বাচনী সমীকরণে বড় ভূমিকা পালন করে। কারণ সিদ্দারামাইয়া সরকারের বিরুদ্ধে বিজেপির অভিযোগ, তিনি আরএসএস-কে ঠেকাতে সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করছেন।
আর কংগ্রেসের দাবি, বিজেপি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে রাজনৈতিক মঞ্চে পরিণত করছে। সিদ্দারামাইয়া অবশ্য স্পষ্টভাবে বলেছেন, “আমাদের সরকারের উদ্দেশ্য শিক্ষাক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখা। কোনও দল বা সংগঠনকে আক্রমণ করা নয়।”
বিরোধীদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুধু রাজনৈতিক দায় এড়ানোর চেষ্টা। রাজ্যের প্রশাসনিক মহল অবশ্য বলছে, সরকার যদি বাস্তবিকভাবে নিয়ম মেনে পদক্ষেপ নেয় এবং কোনও নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে নিশানা না করে, তাহলে এই বিতর্ক শীঘ্রই মিটে যেতে পারে। এখন দেখার বিষয়, এই ‘সার্কুলার বিতর্ক’ কতটা রাজনৈতিক রূপ নেয় এবং আগামি স্থানীয় নির্বাচনের আগে এটি কংগ্রেস ও বিজেপি উভয়ের ভোটব্যাঙ্কে কী প্রভাব ফেলে।