নয়াদিল্লি: শুক্রবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্মানে রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ রাষ্ট্রভোজ (Shashi Tharoor Putin Dinner Controversy)। ভারত–রাশিয়া কূটনৈতিক সম্পর্কের ঐতিহ্যবাহী অধ্যায়কে আরও দৃঢ় করার লক্ষ্যে এই ভোজকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। কিন্তু এই আমন্ত্রণ ঘিরেই তৈরি হয়েছে কেন্দ্রীয় রাজনীতির নতুন বিতর্ক। কারণ, আমন্ত্রণ পেয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর, কিন্তু ডাক পাননি দুই বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খড়গে।
শশী থারুর নিজেই আজ সংসদ ভবনের বাইরে সাংবাদিকদের জানান, তিনি আমন্ত্রণ পেয়েছেন এবং তিনি “নিশ্চিতভাবেই যাবেন”। তাঁর এই ঘোষণা যতটা সরল, ততটাই জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে। কারণ দলের নেতারা অভিযোগ তুলেছেন—এই আমন্ত্রণ বাছাই করে পাঠানো হয়েছে এবং বিরোধী দলনেতাদের বাদ দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে।
বাবরি আবহেই গীতা পাঠের জন্য সেজে উঠছে ব্রিগেড
কংগ্রেস নেতা পবন খেরা স্পষ্ট ভাষায় অভিযোগ তুলেছেন, “সরকার সমস্ত প্রোটোকল ভেঙে দিয়েছে। এটা কোনও সাধারণ সিদ্ধান্ত নয়। দেশের দুই প্রধান বিরোধী দলনেতাকে বাদ দিয়ে অন্য এক কংগ্রেস সাংসদকে আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক বার্তা লুকিয়ে আছে।” খেরা আরও বলেন, থারুরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করাও আশ্চর্যের। তাঁর কথায়, “আমার নেতারা যখন ডাক পাননি, তখন আমাকে বা আমাদের কাউকে আলাদা করে ডাকলে বোঝা উচিত, এর নেপথ্যে কী খেলা চলছে। আর সেই খেলায় আমাদের সঙ্গী হওয়া উচিত নয়।”
দলের ভিতরে এই সূক্ষ্ম ক্ষোভের সঙ্গে আরও বড় অভিযোগ তুলেছেন রাহুল গান্ধী স্বয়ং। সংসদ ভবনের বাইরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রাহুল বলেন, বিদেশি গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ভারতে এলে সাধারণত বিরোধী দলনেতার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয়। “বাজপেয়ী সরকারেও হতো, মনমোহন সিংহের আমলেও হতো। কিন্তু এখন সেটা আর হয় না,” অভিযোগ রাহুলের।
তিনি আরও দাবি করেন, বিদেশ সফরে গেলে বহু সময়ই তাঁকে বিদেশি নেতারা জানান—ভারত সরকার তাদের বলে দেয় যেন বিরোধী দলনেতার সঙ্গে না দেখা করেন। রাহুলের কথায়, “আমরা দেশের পক্ষেই কথা বলি, কিন্তু সরকার চায় না বিদেশে ভারতের দ্বিতীয় দৃষ্টিভঙ্গি পৌঁছোক। এটা সরকারের নিরাপত্তাহীনতা।”
সরকার অবশ্য এখনও এই অভিযোগের জবাব দেয়নি। কিন্তু রাজনৈতিক মহল বলছে, কেন্দ্র সম্ভবত রাষ্ট্রভোজের অতিথি তালিকা নিয়ে কোনও ‘বিরোধ–সরকার ভারসাম্য’ তৈরি করেছে। অথবা, শশী থারুরকে আলাদা করে আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে তাঁর আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা এবং কূটনৈতিক দক্ষতার জন্য। থারুর রাষ্ট্রসংঘের প্রাক্তন শীর্ষ আমলা, এও বিবেচ্য হতে পারে।
তবে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য তাহলে দুই বিরোধী দলনেতাকে বাদ দেওয়া হল কেন? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নয়া দিল্লির ক্ষমতার পরিমণ্ডলে এটি একটি ‘সিগন্যাল’। আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিরোধী দলনেতাদের গুরুত্ব কমিয়ে দেখানো এবং শাসক দলের সঙ্গে দূরত্ব আরও বাড়ানো দুটিই একসঙ্গে করা সম্ভব এই কৌশলে।
এদিকে কংগ্রেসের অন্দরে থারুরকে নিয়ে আলোচনা আরও বেড়েছে। অনেকেই বলছেন, তিনি আবারও ‘অতিরিক্ত স্বাধীনচেতা’ হয়ে উঠছেন। যদিও থারুর স্পষ্ট জানিয়েছেন তিনি শুধুই ভারতীয় কূটনীতির স্বার্থে আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন, কোনও রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার জন্য নয়। সব মিলিয়ে, পুতিনের সফরকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রভোজের টেবিলের চেয়ার বণ্টন থেকেই তৈরি হয়েছে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উত্তাপ। কূটনীতি এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতির এই মেলবন্ধন এখন সংসদ চত্বরে নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।


