কলকাতা: রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন বা SIR প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের অভ্যন্তরীণ নির্দেশক ও মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (CEC) জ্ঞানেশ কুমার-এর বক্তব্যের মধ্যে তীব্র অসঙ্গতি তুলে ধরে সরব হলেন রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা। তিনি অভিযোগ করেছেন, “ভোটার যাচাইয়ের ক্ষেত্রে কমিশন নিজেই বিভ্রান্তি তৈরি করছে। ফলে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা বাড়ছে।”
২৭ অক্টোবর এক সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার ঘোষণা করেছিলেন ভোটার তালিকার এনুমারেশন ফর্ম পূরণের সময় একজন ব্যক্তি চাইলে তাঁর আত্মীয়ের বিবরণ ব্যবহার করতে পারেন, কাকা বা অন্য কোনো রক্তের সম্পর্ক। অর্থাৎ ভোটার হিসেবে নথিভুক্তির ক্ষেত্রে কাকা বা অন্য রক্তের সম্পর্কের মাধ্যমে লিঙ্ক করা বৈধ।
Ducati Multistrada V4 Pikes Peak ভারতে লঞ্চ হল, দাম শুনলে চক্ষু চড়কগাছ হবে!
কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে ব্যবহৃত BLO সফটওয়্যার এবং ECI-এর নির্দেশিকা ম্যানুয়াল-এ স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, শুধুমাত্র বাবা-মা বা দাদু-ঠাকুমার মাধ্যমে ভোটার ম্যাপিং বৈধ। ফলে সারা রাজ্যের ব্লক ও বুথ পর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে চরম বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
মন্ত্রী শশী পাঁজা আজ সাংবাদিকদের বলেন, “একদিকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলছেন, আত্মীয়ের তথ্য ব্যবহার করা যাবে। অন্যদিকে কমিশনের BLO সফটওয়্যার সেই তথ্য গ্রহণই করছে না। এটি সম্পূর্ণ সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা ও ভোটারদের সঙ্গে প্রতারণা।” তিনি আরও বলেন, “গ্রামীণ এলাকায় বহু মানুষ বাবা-মায়ের পরিবর্তে চাচা বা মামার মাধ্যমে ভোটার লিংক করতে চেয়েছেন, কিন্তু BLO তা গ্রহণ করেননি। এতে বহু প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।”
ECI-এর এই অসামঞ্জস্যপূর্ণ নির্দেশের ফলে ভোটার যাচাই প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়েছে। BLO-দের একাংশ জানিয়েছেন, “আমাদের সফটওয়্যারে এমন কোনো অপশনই নেই যেখানে অন্য আত্মীয়ের তথ্য যুক্ত করা যায়।” ফলে অনেক আবেদনকারীকে ফর্ম ফেরত দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এই বিভ্রান্তি ইতিমধ্যেই SIR নিয়ে ছড়িয়ে পড়া ভয় এবং গুজবকে আরও উস্কে দিচ্ছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে, যেখানে ভোটার শনাক্তকরণ নিয়ে অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা রয়েছে।
শশী পাঁজা অভিযোগ করেছেন “এটি নিছক প্রযুক্তিগত ত্রুটি নয়, বরং প্রাতিষ্ঠানিক দ্বিচারিতা। একদিকে কমিশন গণতান্ত্রিক স্বচ্ছতার কথা বলে, অন্যদিকে তাদের অভ্যন্তরীণ প্রোটোকল সাধারণ নাগরিকের অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করছে।” তিনি কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানান, অবিলম্বে নতুন সার্কুলার জারি করে CEC-এর বক্তব্যের সঙ্গে BLO ম্যানুয়াল ও সফটওয়্যারের কার্যপ্রণালী সমন্বয় করা হোক।
শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে দাবি করা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের এই আচরণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দলের এক মুখপাত্র বলেন, “কমিশনের এই দ্বিমুখী নীতি ভোটার তালিকায় গোপনে বাছাই প্রক্রিয়া চালানোর পথ খুলে দিচ্ছে।” অন্যদিকে বিরোধী বিজেপি এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে, এই বিতর্ক আগামী নির্বাচনের আগে রাজ্যের রাজনীতিতে বড় ইস্যু হয়ে উঠতে পারে।


