ভেদাভেদের রাজনীতির শেষ কোথায়! বিস্ফোরক শশী পাঁজা

shashi-panja-slams-bjp-over-divisive-politics-and-bangladeshi-remark

কলকাতা: আবারও কেন্দ্রীয় রাজনীতির মঞ্চে উঠে এল ভেদাভেদের প্রশ্ন। তৃণমূল সাংসদ ও রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা শনিবার এক বিস্ফোরক মন্তব্য করে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের মানসিকতার তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁর বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে, ক্রমশ ঘৃণা, বিভাজন এবং জাতিগত বিদ্বেষের রাজনীতি যে বিপজ্জনক রূপ নিচ্ছে, তা নিয়ে উদ্বেগ।

Advertisements

শশী পাঁজা বলেন, “গতকাল রাজ্যসভার এক বিজেপি সদস্য লখনৌতে প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখেন যে, ঝাড়ুদাররা নাকি ‘বাংলাদেশি’ এবং ‘সন্ত্রাসবাদী’। ভাবা যায়? একজন সাংসদ এইরকম ঘৃণাত্মক মন্তব্য করছেন। এতটাই দুঃসাহস বেড়ে গেছে যে, বাংলার এক পুলিশ অফিসারকেও ‘খালিস্তানি’ বলেছিলেন বিরোধী দলনেতা!”

ছট উৎসবে টিকিট বুকিং-এর হুড়োহুড়ি, IRCTC-র সাইট ডাউন, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

তিনি প্রশ্ন তোলেন, “কোথায় গিয়ে শেষ হবে এই বিদ্বেষের রাজনীতি? কাউকে ‘খালিস্তানি’, কাউকে ‘সন্ত্রাসবাদী’, আবার কাউকে ‘বাংলাদেশি’ বলে দাগিয়ে দেওয়া এ কেমন মানসিকতা?” মন্ত্রী আরও বলেন, “সম্প্রতি সোনালি খাতুন নামে এক গর্ভবতী মহিলা এবং আরও পাঁচজনকে শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য বেআইনিভাবে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। বাংলা বললেই কেউ বাংলাদেশি হয়ে যায় না। এই দেশ, এই রাজ্য তাদেরও মতোই।”

ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে। সোনালি খাতুন ও তাঁর সঙ্গীরা বীরভূম জেলার বাসিন্দা। তদন্তে জানা গেছে, তাঁরা ভারতীয় নাগরিক, কিন্তু প্রশাসনিক বিভ্রাটে তাঁদের বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে কলকাতা হাইকোর্ট ও বাংলাদেশের হাইকোর্ট দু’দিক থেকেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাঁদের চার সপ্তাহের মধ্যে ফেরত আনার।

Advertisements

শশী পাঁজা এই ঘটনার প্রসঙ্গে বলেন, “বাংলাদেশের আদালত এবং আমাদের হাইকোর্ট, দু’জায়গা থেকেই একই কথা বলা হয়েছে ওরা এই মাটির সন্তান, ওরা ভারতীয় নাগরিক। কিন্তু এটা কতটা লজ্জাজনক যে, কেবলমাত্র বাংলা ভাষা বলার জন্য মানুষকে এইভাবে অপমানিত হতে হচ্ছে!”

রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে এই মন্তব্যগুলো কি শুধুমাত্র ভোটের রাজনীতি, নাকি সমাজে বিভাজন তৈরির এক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা? বিশ্লেষকদের মতে, উত্তর ভারতের রাজনীতিতে ভাষা ও জাতিগত বিভাজনের ইস্যু ক্রমশ তীব্র হচ্ছে, এবং তার আঁচ এখন বাংলাতেও লাগছে।

শশী পাঁজা তীব্র কণ্ঠে বলেন, “আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক। কেউ হিন্দি বললে ভারতীয়, কিন্তু কেউ বাংলা বললেই বাংলাদেশি এই মানসিকতা ভীষণ বিপজ্জনক। বিজেপির উচিত মানুষের মধ্যে ভালোবাসা ছড়ানো, বিভাজন নয়।” তাঁর বক্তব্যের পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিজেপি সূত্রে অবশ্য বলা হয়েছে, “তৃণমূল অযথা ঘটনাকে রাজনৈতিক রং দিচ্ছে।” তবে সাধারণ মানুষের একাংশ শশী পাঁজার বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন।

তাদের মতে সমাজের নানা মহল থেকে উঠছে একটাই প্রশ্ন “ভাষা বা জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে মানুষকে দাগিয়ে দেওয়া কোথায় নিয়ে যাবে আমাদের সমাজকে?” বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস বারবার দেখিয়েছে, বিভাজন নয়, একতাই শক্তি। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো যেন সেই ঐতিহ্যকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।