দার্জিলিং, তরাই ও ডুয়ার্স পাহাড়ি অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে কেন্দ্রের নেওয়া সাম্প্রতিক উদ্যোগ নিয়ে ফের রাজনৈতিক তরজায় উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গ। এই উদ্যোগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির পরই কড়া প্রতিক্রিয়া দিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য।
শনিবার তিনি তার এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন “পাহাড়ের মানুষকে নিয়ে কেন্দ্র যদি ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়, তাতে মুখ্যমন্ত্রীর এত অস্থিরতা কেন? দার্জিলিং, ডুয়ার্স, তরাই এই অঞ্চলগুলো ভারতের গর্ব, পশ্চিমবঙ্গের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সেখানে শান্তি ও উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র যদি একজন অভিজ্ঞ আধিকারিককে আলোচনার দায়িত্ব দেয়, তবে সেটা স্বাগত জানানো উচিত ছিল রাজ্যের।”
তিনি অভিযোগ করেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া আসলে তাঁর রাজনৈতিক আতঙ্কের প্রকাশ। পাহাড়ে তৃণমূলের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, উন্নয়নের অভাব, এবং স্থানীয় নেতৃত্বের উপর চাপ সবকিছুতেই পাহাড়বাসী বিরক্ত। এখন কেন্দ্র যখন গঠনমূলক পথে সমাধান খুঁজছে, তখন মুখ্যমন্ত্রীর ভয় সত্যিটা প্রকাশ পেয়ে যাবে।” শমীকের কথার রেশ ধরে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রথম থেকেই এমন করেন। বিরোধিতা করাই তার কাজ এবং তিনি সবসময় নিজেই কৃতিত্ব নিয়ে যেতে চান।
বিজেপি নেতা আরও বলেন, “যিনি মুখে ‘ফেডারেলিজম’-এর কথা বলেন, তাঁরাই কেন্দ্রীয় প্রকল্প আটকে দেন, সহযোগিতার বদলে বিরোধ তৈরি করেন। এটাই তৃণমূল সরকারের আসল চরিত্র।” তিনি দাবি করেন, “পাহাড়ের মানুষ আজ বুঝে গেছেন, তৃণমূল মানে প্রতারণা, আর কেন্দ্র মানে উন্নয়ন ও শান্তি। বিজেপি সরকার পাহাড়ের জন্য যা করেছে, তা আগে কোনও সরকার করেনি। সড়ক, শিক্ষা, পর্যটন ও যোগাযোগ সব ক্ষেত্রে উন্নয়নের ধারায় কেন্দ্র এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পাহাড়কে।”
উল্লেখ্য, সম্প্রতি কেন্দ্র পাহাড়ি অঞ্চলের স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে এক সিনিয়র আমলাকে আলোচনার দায়িত্ব দিয়েছে। এই পদক্ষেপকেই “রাজ্যের উপর হস্তক্ষেপ” বলে সমালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বিজেপির দাবি, কেন্দ্র সংবিধানের আওতাতেই উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে। শমীক বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভয় একটাই যদি পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসে, তবে তাঁর রাজনীতির স্বার্থ চরিতার্থ করা হবে না। তাই তিনি সর্বদা কেন্দ্রের উদ্যোগে বাধা দেন।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ইস্যু পাহাড়ের ভোট রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। দার্জিলিং ও সংলগ্ন এলাকাগুলিতে বিজেপি বরাবর শক্ত অবস্থানে। এবার কেন্দ্রের নতুন উদ্যোগ সেই অবস্থান আরও মজবুত করতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের কথায়, “তৃণমূল সরকার বছরের পর বছর পাহাড়বাসীর সমস্যা এড়িয়ে গেছে। এখন কেন্দ্র সরাসরি সমাধানের পথে নামায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অস্বস্তি বাড়ছে। এতে বিজেপি রাজনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে।”
পাহাড়ের এক স্থানীয় বাসিন্দার ভাষায়, “আমরা শান্তি চাই, উন্নয়ন চাই। রাজনীতি নয়। যদি কেন্দ্র সত্যিই সমস্যার সমাধান করে, আমরা অবশ্যই সমর্থন করব।” সব মিলিয়ে পাহাড়ের রাজনীতি এখন ফের কেন্দ্র বনাম রাজ্য সংঘাতের কেন্দ্রে। একদিকে কেন্দ্রের নতুন উদ্যোগ, অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর কড়া প্রতিক্রিয়া এই দুইয়ের মাঝে পাহাড়বাসীর প্রত্যাশা একটাই স্থায়ী শান্তি ও উন্নয়ন।