কলকাতা, ১০ নভেম্বর: আবারও চাঞ্চল্যের কেন্দ্রবিন্দু সন্দেশখালি। এক তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য ও স্কুলশিক্ষকের বিরুদ্ধে উঠেছে গুরুতর অভিযোগ। তিনি এক তৃণমূল নেত্রীর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, ওই মহিলাকে বলা হয়েছে, যদি তিনি তাঁর দায়ের করা মামলা তুলে না নেন, তাহলে তাঁর পরিবারকে গুলি করে খুন করা হবে।
জানা গেছে, ২০২৪ সালে ওই মহিলা, যিনি নিজেও স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের এক নেত্রী, অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। অভিযোগ ছিল, ওই ব্যক্তি গোপনে তার ব্যাক্তিগত ছবি তুলেছিলেন, সেই ছবি দিয়ে তাঁকে ব্ল্যাকমেল করছিলেন এবং কুরুচিকর বার্তা পাঠিয়ে মানসিকভাবে নির্যাতন করছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ এক বছর কেটে গেলেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।
‘অভিযান ব্রহ্মশিরা’য় ভারতীয় সেনা, রান ও ক্রিক সেক্টরে পরীক্ষা যৌথ যুদ্ধক্ষমতার
ঘটনাটির মোড় ঘুরেছে সম্প্রতি ওই তৃণমূল শিক্ষকের পুনরায় হুমকির ঘটনা সামনে আসতেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রাতে এক সভা শেষে বাড়ি ফেরার পথে ওই মহিলা নেত্রীর গাড়ি আটকায় অভিযুক্ত ব্যক্তি। কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে তিনি কোমর থেকে পিস্তল বের করে মহিলার মাথায় ঠেকিয়ে বলেন, “মামলা তুলে নাও, না হলে পরিবারকে উড়িয়ে দেব।”
এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই পঞ্চায়েত সদস্য স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী এবং দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসনের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন। মহিলার পরিবার এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তিনি পুলিশের কাছে পুনরায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন, তবে এখনো পর্যন্ত কোনও গ্রেফতারির খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয় মানুষদের প্রশ্ন যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি সাধারণ মানুষ হতেন, তবে কি এতদিনেও পুলিশ নড়েচড়ে বসত না? এক বাসিন্দা বলেন, “যেখানে এক মহিলা নেত্রীই নিরাপত্তাহীন, সেখানে সাধারণ মহিলারা কীভাবে নিরাপদ থাকবেন?”
রাজনৈতিক মহলেও এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া। বিরোধী দল বিজেপি ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছে। রাজ্য বিজেপির এক মুখপাত্র বলেন, “সন্দেশখালি ফের প্রমাণ করল তৃণমূল শাসিত বাংলায় মহিলারা নিরাপদ নয়। এখন তৃণমূলের মহিলারাই তৃণমূলের পুরুষ নেতাদের হাতে নিগৃহীত হচ্ছেন।” অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা নেতৃত্বের দাবি, ঘটনাটি ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের ফল এবং দলীয় বিষয় নয়। তারা জানিয়েছে, “অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত হবে। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে দলের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে প্রশ্ন উঠেছে যখন অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজে একজন শিক্ষক এবং নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য, তখন প্রশাসন এতদিন নিশ্চুপ কেন ছিল? আইনজীবী মহল মনে করছে, এটি কেবল এক মহিলার মানহানির মামলা নয়, বরং এটি আইনের অবমাননা ও প্রশাসনিক গাফিলতির জ্বলন্ত উদাহরণ।
রাজ্যের নারী অধিকার কর্মীরাও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, “এটা রাজনৈতিক দলের বিষয় নয়, এটা এক নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তার প্রশ্ন। পুলিশ যদি নিরপেক্ষভাবে কাজ না করে, তাহলে এই ধরনের অপরাধ আরও বাড়বে।”


