বঙ্গ রাজনীতিতে নির্বাচনকে ঘিরে অভিযোগ–প্রত্য অভিযোগ নতুন কিছু নয়। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন তুলে এসেছে। তাদের অভিযোগ ছিল, নির্বাচন কমিশন নাকি কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও একাধিকবার নাম না করেই মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। কিন্তু রাজনৈতিক সমীকরণে হঠাৎই যেন পালাবদল! এবার সেই জ্ঞানেশ কুমারের বিরুদ্ধেই সরাসরি কটাক্ষ করলেন বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য (Samik Bhattacharya)।
শুক্রবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শমীক ভট্টাচার্য স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “জ্ঞানেশ কুমারকে ওখানে বলে দুটি জ্ঞানগর্ভ বাণী দিলেই চলবে না। গ্রাউন্ড জিরোয় এসে বাস্তব পরিস্থিতি দেখতে হবে।” তাঁর কথায়, নির্বাচন কমিশন যদি ন্যায়সঙ্গত ভোট নিশ্চিত করতে চায়, তবে শুধু এয়ারকন্ডিশন্ড ঘরে বসে নির্দেশ দেওয়াই যথেষ্ট নয়। মাঠে নেমে পরিস্থিতি বোঝা, মানুষের সঙ্গে কথা বলা, এবং প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াই জরুরি।
রাজনৈতিক মহলে শমীকের এই মন্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এমন মন্তব্য বিজেপির অন্দরেই কোনও অসন্তোষ বা উদ্বেগের ইঙ্গিত দেয়। কারণ এতদিন পর্যন্ত শাসকদলই কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছিল। কিন্তু এবার বিরোধী দল বিজেপির রাজ্য সভাপতি একই ধরনের অভিযোগ তুলছেন, যা রাজনৈতিক চিত্রে এক নতুন সুর আনছে।
শমীক ভট্টাচার্যের অভিযোগের তির মূলত কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের ‘মাঠ-পর্যায়ের বাস্তব অবস্থা বোঝার ব্যর্থতা’র দিকে। তাঁর দাবি, গ্রামীণ এলাকা থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ভোটপ্রক্রিয়া নিয়ে ভীতি, সন্ত্রাস, চাপ, এবং কারচুপির অভিযোগ উঠে আসছে। কিন্তু সেই অভিযোগগুলো কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, “আপনি দিল্লিতে বসে বুলেট পয়েন্টে নির্দেশ দেবেন, আর ভাববেন সব ঠিকঠাক চলছে—এটা চলবে না।”* তাঁর মতে, কেন্দ্রীয় দলগুলি সরেজমিনে গিয়ে ভোটপরিস্থিতি খতিয়ে না দেখলে নির্বাচন সত্যিকারের গণতান্ত্রিক হবে না।
শাসকদল তৃণমূল অবশ্য শমীক ভট্টাচার্যের এই মন্তব্যকে রাজনৈতিক চাপে পড়া বিজেপির প্রতিক্রিয়া বলে ব্যাখ্যা করেছে। তাদের বক্তব্য, এতদিন বিজেপি নির্বাচন কমিশনের প্রশংসা করত, এখন ফলাফলের সম্ভাবনা অনিশ্চিত বলে অভিযোগের সুর তুলছে। তৃণমূল নেতারা কটাক্ষ করে বলেছেন, “এবার কি তবে বিজেপিই বুঝতে পারছে যে কমিশন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ নয়?”
