কেরল: আবারও উত্তপ্ত কেরলের রাজনৈতিক মহল। কেরল রাজভবনে অনুষ্ঠিত শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির ১২৫তম জন্মবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত বক্তৃতা সিরিজ ঘিরে ফের তীব্র রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে রাজ্যে।
অনুষ্ঠানে আরএসএস চিন্তাবিদ ও ‘প্রজ্ঞা প্রবাহের’ জাতীয় সমন্বয়ক জে নন্দকুমার বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার ধারাবাহিকভাবে প্রয়াত শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির নীতিই বাস্তবায়ন করছে। তাঁর চিন্তা ও দর্শন আজও দেশের নীতি নির্ধারণে অনুপ্রেরণা।”
নকল সবুজ আতসবাজি পেলে প্রস্তুতকারকের লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশ
আরএসএস-ঘনিষ্ঠ এই চিন্তাবিদ আরও বলেন, “শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি ছিলেন সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা। তিনি এমন এক শিক্ষানীতির স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেখানে জাতির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য শিক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্রে থাকবে। আজকের জাতীয় শিক্ষানীতি (NEP) সেই স্বপ্নেরই বাস্তব রূপ।” তবে এই বক্তৃতা ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে তুমুল প্রতিক্রিয়া।
কেরলের বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যপাল রাজেন্দ্র আরলেকারকে অভিযুক্ত করেছে, তিনি নাকি সংবিধানিক পদ ব্যবহার করে রাজভবনকে ‘আরএসএস প্রচারের কেন্দ্র’ হিসেবে ব্যবহার করছেন। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের দলের অভিযোগ, সরকারি খরচে আরএসএসের আদর্শ প্রচার করা হচ্ছে, যা সংবিধানিক শপথের পরিপন্থী।
শ্যামাপ্রসাদ একটি বক্তৃতায় বলেছিলেন “পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দুরা কেন এখনও ভয়ে দিন কাটাবে, আর আমরা ধর্মনিরপেক্ষতার নামে চুপ করে থাকব?” বক্তৃতার এই লাইন উদ্ধৃত করে নন্দকুমার বলেন, “CAA ঠিক এই ভাবনার প্রতিফলন। শ্যামাপ্রসাদ নিজে স্পষ্ট করে লিখেছিলেন, জাতীয় ঐক্য কখনও গড়ে উঠবে না যদি আমরা তাঁদের তুষ্ট করতে থাকি, যারা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐক্যের ভিত্তিকেই অস্বীকার করে।”
রাজভবনের এই বক্তৃতা সিরিজের প্রথম পর্বে কয়েক মাস আগে বক্তা ছিলেন অর্থনীতিবিদ এস গুরুমূর্তি। আর এবার দ্বিতীয় পর্বে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নন্দকুমার। বাম শিবিরের এক মুখপাত্র বলেন, “রাজভবন জনগণের, কোনও সংগঠনের নয়। এখানে আরএসএস মতাদর্শ প্রচারের চেষ্টা কেরলের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির পরিপন্থী।”
অন্যদিকে রাজ্যপালপক্ষের যুক্তি, এই বক্তৃতা সিরিজ কোনও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নয়, বরং ভারতের মহান চিন্তাবিদদের স্মরণে আয়োজিত একটি সাংস্কৃতিক উদ্যোগ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিকে কেন্দ্র করে এই বিতর্ক শুধু কেরলে নয়, জাতীয় পর্যায়েও এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে। কেন্দ্রীয় নীতিতে মুখার্জির ভাবনার প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে—বিশেষ করে নাগরিকত্ব, শিক্ষানীতি ও আত্মনির্ভরতা বিষয়ে। নন্দকুমারের বক্তব্য সেই দিকেই ইঙ্গিত দেয়।