গুয়াহাটি, ৬ নভেম্বরঃ অসম রাজ্য সরকারের মুখ্য তথ্য আয়ুক্ত ভাস্করজ্যোতি মহন্তের (Bhaskar Jyoti Mahanta) আচমকা পদত্যাগে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ প্রশাসনিক জীবনে নিষ্ঠা ও কঠোরতার জন্য পরিচিত এই প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিকের পদত্যাগ রাজ্য রাজনীতিতে নতুন জল্পনার জন্ম দিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের এক শীর্ষ সূত্র জানিয়েছে, ভাস্করজ্যোতি মহন্ত বুধবার মুখ্য তথ্য আয়ুক্তের পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁর পদত্যাগপত্র ইতিমধ্যেই রাজ্যপালের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সূত্রটি আরও জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই তিনি এই পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
পদত্যাগের পর ভাস্করজ্যোতি মহন্ত সামাজিক মাধ্যমে একটি সংক্ষিপ্ত মন্তব্য করে জানান, তিনি ‘ব্যক্তিগত কারণে’ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও সরকারিভাবে এই ঘটনাকে একটি স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে, তবে সময়কাল ও প্রেক্ষাপট বিচার করলে ঘটনাটিকে ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠছে।
উল্লেখযোগ্য যে, বর্তমানে জুবিন গার্গের মৃত্যুকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে কারাবন্দি শ্যামকানু মহন্ত ভাস্করজ্যোতি মহন্তের সহোদর ভাই। এই সংবেদনশীল ঘটনার পরেও ভ্রাতৃদ্বয়ের একজন রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদে বহাল থাকায় সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। নানা মহল থেকে তাঁর পদত্যাগের দাবি ক্রমশ জোরদার হচ্ছিল।
এই পরিস্থিতিতেই মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে নির্দেশ আসে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। বিশেষত, মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই জুবিন গার্গের মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন— ফলে এই সময়ে ভাস্করজ্যোতি মহন্তের পদত্যাগ বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পদত্যাগ কেবল একটি প্রশাসনিক পরিবর্তন নয়, বরং এটি সরকারের স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার প্রতিফলন। একদিকে এটি ভাস্করজ্যোতি মহন্তের ব্যক্তিগত নৈতিকতার পরিচায়ক, অন্যদিকে এটি মুখ্যমন্ত্রীর সরকারের কঠোর “জিরো টলারেন্স” নীতিরও প্রতিফলন।
২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল অসম পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর ভাস্করজ্যোতি মহন্তকে মুখ্য তথ্য আয়ুক্ত পদে নিয়োগ করা হয়েছিল। কর্মজীবনে তিনি শৃঙ্খলা, সততা ও প্রশাসনিক দক্ষতার জন্য পরিচিত ছিলেন। তবে জুবিন গার্গের মৃত্যুকাণ্ড ঘিরে যখন রাজ্যে উত্তাল পরিস্থিতি, তখন তাঁর এই পদত্যাগ নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ এক পদক্ষেপ।
এই আচমকা পদত্যাগ কেবল একটি পদ পরিবর্তনের ঘটনা নয়— এটি ন্যায়, নৈতিকতা ও দায়বদ্ধতার এক স্পষ্ট বার্তা, যা জানিয়ে দেয় যে সরকার ন্যায়ের প্রশ্নে কোনো আপোষ করে না।


