কনভয়ে ইটবৃষ্টি! অল্পের জন্য রক্ষা দার্জিলিঙের সাংসদের

raju-bista-convoy-attack-darjeeling-politics

দার্জিলিঙ:দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তার কনভয়ের উপর হামলার অভিযোগে ফের উত্তপ্ত পাহাড় রাজনীতি। শনিবার বিকেলে সুখিয়াপোখরির কাছে বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তার কনভয় লক্ষ করে একের পর এক পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সেদিন রিম্ভিক ও লোধামায় ধস-বিধ্বস্ত অঞ্চল পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে এই ঘটনা ঘটে।

Advertisements

আচমকা রাজুর গাড়ির কনভয়ের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু লোকজন ঢিল ছোড়েন বলে অভিযোগ। ভাগ্যক্রমে পাথরটি সাংসদের গাড়িতে না লেগে পেছনের একটি গাড়িতে গিয়ে লাগে। যদিও এই ঘটনায় কেউ আহত হননি।

বেঁচে যাওয়া রুটিতে তৈরি করুন অনন্য মিষ্টি—দীপাবলির নতুন স্বাদ!

ঘটনার পর রাজু বিস্তা সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন, “আমাকে লক্ষ্য করেই হামলা করা হয়েছে। এটা নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত আক্রমণ।” তিনি জানান, এ ঘটনায় জোরবাংলো থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। রাজুর অভিযোগ, “এ রাজ্যে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার জন্য হামলার রাজনীতি চলছে। কিন্তু এইভাবে পাহাড়ের মানুষকে ভয় দেখানো যাবে না। কেউ যদি হিংসার রাজনীতিতে ভরসা রাখে, তাহলে আমিও তৈরি।”

বিজেপি সাংসদের এই অভিযোগ ঘিরে ফের রাজনীতি চড়তে শুরু করেছে পাহাড়ে। সম্প্রতি কেন্দ্র সরকার দার্জিলিং, তরাই ও ডুয়ার্সের গোর্খা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার পঙ্কজ কুমার সিংকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়োগ করেছে। ঠিক তার পরদিনই ঘটে গেল এই হামলার ঘটনা। রাজুর দাবি, “এটা নিছক কাকতালীয় নয়। কেউ বা কারা শান্তি বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে।”

অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, “পাহাড়ের সমস্যা সমাধানে রাজ্যের সঙ্গে পরামর্শ না করেই কেন্দ্র একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” এই রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেই বিজেপি সাংসদের কনভয়ে হামলার ঘটনা নিঃসন্দেহে নতুন মাত্রা যোগ করেছে পাহাড় রাজনীতিতে।

Advertisements

উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আগেই উত্তপ্ত হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। কয়েকদিন আগেই জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় ত্রাণ পরিদর্শনে গিয়ে হামলার মুখে পড়েছিলেন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু এবং বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। অভিযোগ, বিক্ষুব্ধ জনতা তাঁদের গাড়ি লক্ষ করে লাঠি ও পাথর ছুঁড়েছিল।

গুরুতর আহত হন সাংসদ খগেন মুর্মু, যার মুখে ও চোখের নীচে রক্তক্ষরণ হয়। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজেই টুইট করে তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করেছিলেন। পাল্টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যেও রাজনীতি করছে বিজেপি।”

এবার আবার রাজু বিস্তার কনভয়ের উপর হামলা। পাহাড়ে শান্তি ফেরানোয় কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ক্রমবর্ধমান মতবিরোধের আবহে এই ঘটনা আরও উদ্বেগজনক। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, পাহাড়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কেন্দ্রীয় উদ্যোগের বিরোধিতার মধ্যেই এই হামলা স্পষ্টভাবে এক ধরনের বার্তা বহন করছে। রাজু বিস্তার কথায়, “পাহাড়বাসীকে বুঝতে হবে হিংসার রাজনীতি কোনওদিনও পাহাড়ে স্থায়ী সমাধান আনতে পারে না।”

রাজ্য প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, হামলার ঘটনায় কারা যুক্ত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে বিজেপির দাবি, শাসকদলের মদতে এই আক্রমণ ঘটানো হয়েছে। রাজ্যজুড়ে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজেপির প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। পাহাড়ের রাজনীতি আবারও অস্থিরতার পথে হাঁটছে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।