কলকাতা: রাজভবন থেকে অস্ত্র সরবরাহের মতো বিস্ফোরক অভিযোগকে কেন্দ্র করে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল বাংলার রাজনীতি। তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে ছড়িয়েছে চাঞ্চল্য।
অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। রাজ্যজুড়ে যখন রাজনৈতিক সংঘাত, আইনশৃঙ্খলা ও ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণ নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে, তখন এই ঘটনায় নতুন তরজা শুরু হয়েছে শাসক ও বিরোধী শিবিরের মধ্যে।
“বিশ্বব্যাংকের ধারের টাকায় ভোটে লড়েছে নীতিশ-জোট!” বিস্ফোরক দাবী জন সুরজের!
সম্প্রতি তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন যে, রাজভবন থেকে নাকি অস্ত্র সরবরাহের মতো ‘ভয়ঙ্কর কর্মকাণ্ড’ চলছে এবং এই সমস্ত কাণ্ডের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাজ্যপাল। তাঁর মতে, রাজ্যপাল এমন সব শক্তির প্রতিনিধিত্ব করছেন, যারা বাংলার শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করে রাজনৈতিক মেরুকরণ বাড়াতে চাইছে। তাঁর এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়ায়।
এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দিলীপ ঘোষ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “এটাই তৃণমূলের সংস্কৃতি। দেশের সংবিধান, প্রতিষ্ঠান সবকিছুকে অপমান করাই এদের অভ্যাস। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অর্থহীন কথা বলে শুধু বিতর্ক সৃষ্টি করতে চান এবং মিডিয়ার সামনে আসার চেষ্টা করেন।” তিনি আরও বলেন, “রাজভবন দেশের অন্যতম উচ্চ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সেখানে অস্ত্র সরবরাহের মতো অভিযোগ করা মানে এই প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা। তৃণমূল নেতারা মানুষের প্রকৃত সমস্যা আড়াল করতেই এই ধরনের নাটকীয় বক্তব্য দেন।”
অন্যদিকে তৃণমূল শিবিরের দাবি, রাজভবনের সাম্প্রতিক বিভিন্ন রাজনৈতিক অবস্থান থেকেই তাঁদের সন্দেহের সূত্রপাত। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “আমরা নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই কথা বলি। রাজভবন যে নিরপেক্ষ নয়, তা রাজ্যবাসী বহু দিন ধরেই লক্ষ্য করছে। আমাদের সাংসদ যা বলেছেন, তা হালকা ভাবে দেখলে ভুল হবে।”
রাজ্য রাজনীতির পরিমণ্ডলে এই তরজাকে অনেকে কেন্দ্র–রাজ্য সংঘাতের নতুন অধ্যায় হিসেবেও দেখছেন। সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সম্পর্ক বারবার তিক্ত হয়েছে। শিক্ষা, আইনশৃঙ্খলা থেকে শুরু করে প্রশাসনিক পদক্ষেপ প্রায় সব ক্ষেত্রেই পরস্পরবিরোধী অবস্থান নেওয়া হয়েছে দুই পক্ষের তরফে। ফলে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য যেন সেই চলমান সংঘাতকে আরও তীব্র করে তুলেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তৃণমূলের এই অভিযোগ ভোটারদের সামনে কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি অবিশ্বাসের ইঙ্গিত হিসেবে হাজির হতে পারে। অন্যদিকে বিজেপি চাইছে এই মন্তব্যকে ইস্যু করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘অরাজকতার রাজনীতি’ চালানোর অভিযোগ আরও জোরদার করতে।
রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়লেও সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে—সংবিধানিক পদাধিকারীকে কেন্দ্র করে এত বড় অভিযোগ ঠিক কতটা বাস্তবসম্মত? অভিযোগের সত্যতা যাচাই বা তদন্তের কথা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি। তবে তৃণমূল সাংসদের বক্তব্য যে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন ঝড় তুলেছে, তা বলাই যায়।


