নির্বাচনের আগে ‘ভোট চুরি যাত্রা’ মন্তব্যে ভাইরাল বিরোধী দলনেতা

rahul-gandhi-vote-chori-yatra-slip-bihar-controversy

পাটনা: নির্বাচনের আগে বিহারের রাজনৈতিক মঞ্চে ফের বিতর্কের ঝড় তুললেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। সোমবার একটি জনসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি এমন একটি মন্তব্য করেন, যা মুহূর্তের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায়। রাহুল বলেন, “আমরা বিহারে ভোট চুরি যাত্রা শুরু করেছি…” এতটুকু বলার পরেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে দ্রুত সংশোধন করেন, “না না, আমি বলতে চেয়েছিলাম ভোটার অধিকার যাত্রা।”

Advertisements

এই ‘জিভ ফসকানো’ মন্তব্য ঘিরেই তীব্র রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। বিজেপি নেতা আরপি সিং কটাক্ষ করে বলেন, “এটাই কংগ্রেসের আসল মানসিকতা। যখন কোনো আন্দোলনের উদ্দেশ্য স্পষ্ট নয়, শুধু রাজনৈতিক প্রদর্শনীর জন্য করা হয়, তখন এমন ভুল স্বাভাবিক।”

   

ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা! মালগাড়িকে ধাক্কা যাত্রিবাহী ট্রেনের, মৃত একাধিক

তিনি আরও যোগ করেন, “যদি সত্যিই কংগ্রেসের দাবি অনুযায়ী ভোটার তালিকায় অনিয়ম থাকে, তাহলে তারা নির্বাচনী কমিশনের সামনে মাত্র ছয় বা আটটি প্রমাণও রাখতে পারত। কিন্তু তা তারা করেনি, কারণ গোটা প্রচারটাই আসলে একটি প্রস্তুতিমূলক অজুহাত যাতে ভোটে হারার পর বলা যায় ‘ভোট চুরি হয়ে গেছে’। এটা নিছকই প্রচারণা।”

আরপি সিংয়ের মতে, রাহুলের এই মন্তব্য আসলে “একটি ফ্রয়েডিয়ান স্লিপ” যেখানে কেউ অজান্তেই নিজের মনের কথা বলে ফেলেন। “রাহুল যা বলেননি, সেটাই আসলে তার দল করে,” মন্তব্য বিজেপি নেতার। অন্যদিকে, কংগ্রেসের তরফে অবশ্য বিষয়টি নিয়ে বড় করে কিছু বলা হয়নি। দলের রাজ্যসভাপতি জানিয়েছেন, “রাহুলজির মন্তব্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। এটি শুধুমাত্র একটি ভাষাগত ভুল, ইচ্ছাকৃত নয়।” তবে রাজনৈতিক মহলে এই বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় অব্যাহত।

Advertisements

এই বিতর্কের মধ্যেই রাহুলের জনসংযোগের অন্যরকম এক দিকও সামনে এসেছে। রবিবার বিহারের বেগুসরাই জেলায় নির্বাচনী প্রচারের ফাঁকে দেখা গেল ভিন্ন এক রাহুলকে। বিকাশশীল ইনসান পার্টির (ভিআইপি) প্রধান মুকেশ সাহনির সঙ্গে মাছ ধরতে নেমে পড়েন তিনি।

‘মল্লাহ পুত্র’ নামে পরিচিত সাহনির সঙ্গে নৌকায় উঠে পুকুরের মাঝখানে পৌঁছন রাহুল। সাদা টি-শার্ট ও কার্গো প্যান্ট পরা রাহুলকে দেখে আশেপাশের গ্রামবাসীরা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন। সাহনি কোমর পর্যন্ত জলে নেমে জাল ফেলেন, আর রাহুলও পরে সেই দৃশ্যের অংশ হন। মুহূর্তেই জনতার মোবাইল ক্যামেরায় ধরা পড়ে বিরল দৃশ্যটি।

রাহুলের এই ‘মানুষের সঙ্গে মিশে থাকা’ প্রচার প্রচেষ্টাকে কেউ কেউ স্বাগত জানিয়েছেন, আবার কেউ একে নিছক নাটক বলে সমালোচনা করেছেন। বিজেপির দাবি, “যিনি জনগণের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক গড়ার চেয়ে কেবল ইমেজ গড়ায় ব্যস্ত, তার কাছে এমন ছবি ছাড়া আর কিছুই রাজনৈতিক মূলধন নয়।”

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাহুলের এই প্রচার কৌশল নিঃসন্দেহে প্রচলিত ধারা থেকে আলাদা। যেখানে তিনি মাঠে নেমে সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করছেন। কিন্তু একইসঙ্গে ‘ভোট চুড়ুই যাত্রা’ মন্তব্যটি তাঁর প্রতিপক্ষদের হাতে এক নতুন অস্ত্র তুলে দিয়েছে। সব মিলিয়ে, বিহারের ভোটযুদ্ধ যত এগোচ্ছে, ততই তীব্র হচ্ছে রাজনৈতিক বাকযুদ্ধ। রাহুল গান্ধীর এক ‘ভুল শব্দ’ এবং এক ‘জলযাত্রা’ দুই-ই যেন এই নির্বাচনী মরশুমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।