‘মেক ইন চায়না’ নয়, ‘মেক ইন বিহার’ চাই! দাবি রাহুলের

rahul-gandhi-make-in-bihar-statement

পটনা: কংগ্রেস নেতা তথা লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী আজ বিহারের মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সরাসরি আক্রমণ করে বলেছেন, “নোটবন্দি আর জিএসটি দিয়ে মোদী ভারতের ছোট ব্যবসাকে শেষ করে দিয়েছেন। আজ আপনি যে জিনিসই দেখবেন তার পিছনে ‘মেক ইন চায়না’ লেখা থাকবে। কিন্তু আমরা চাই ‘মেক ইন চায়না’ নয়, ‘মেক ইন বিহার’!” এই বক্তব্য বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আবহে যেন একটা রাজনৈতিক ঝড় তুলেছে।

Advertisements

রাহুলের এই ‘মেক ইন বিহার’ স্লোগান কি শুধু নির্বাচনী প্রচার? নাকি ছোট উদ্যোগপতিদের বাঁচানোর একটা বাস্তবসম্মত দিশা? দেশজুড়ে এই প্রশ্ন উঠছে।রাহুল গান্ধী পটনায় এক জনসভায় দাঁড়িয়ে বলেন, “২০১৬-এর ৮ নভেম্বর রাতে যখন নোটবন্দি ঘোষণা হয়, তখন কোটি কোটি ছোট ব্যবসায়ী লাইনে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন। তাদের ব্যবসা শেষ হয়ে গেল। তারপর জিএসটি যা ছোট দোকানদারদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের মতো। আজ বাজারে গেলে দেখবেন, খেলনা থেকে কাপড়, ইলেকট্রনিক্স থেকে জুতো সব ‘মেক ইন চায়না’।

   

বুধবার বিকেলে কৃষ্ণনগর-চন্দননগরে মমতা

কেন? কারণ মোদীজির নীতি চীনকে লাভ দিয়েছে, ভারতের ছোট ব্যবসায়ীকে মেরে ফেলেছে।” রাহুলের দাবি, এই দুই সিদ্ধান্তের ফলে লক্ষ লক্ষ কুটির শিল্প, ছোট কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বিহারে যেমন মধুবনীর মিথিলা পেইন্টিং, ভাগলপুরের সিল্ক, পটনার লিচু এসবের বাজার ধ্বংস হয়েছে। চীনা পণ্যের ঢল নেমে এসেছে, আর স্থানীয় উদ্যোগপতিরা রাস্তায় নেমেছেন।

রাহুল আরও বলেন, “আমরা চাই ‘মেক ইন বিহার’। বিহারের যুবকরা যেন নিজের রাজ্যে কারখানা গড়ে, নিজের পণ্য বানায়, বিশ্বে রফতানি করে। কিন্তু মোদীজির সরকার তো চীনের সঙ্গে ব্যবসা বাড়াচ্ছে। গালওয়ানের পরও চীনা অ্যাপ ফিরিয়ে আনা হচ্ছে, চীনা বিনিয়োগকে স্বাগত জানানো হচ্ছে। তাহলে বিহারের যুবক কী করবে?”

তিনি কংগ্রেসের পরিকল্পনা তুলে ধরেন জিএসটি সরলীকরণ, ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য একক উইন্ডো ক্লিয়ারেন্স, ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ ছাড়াই গ্যারান্টি, এবং স্থানীয় শিল্পের জন্য বিশেষ প্যাকেজ। বিহারের জন্য তিনি ‘বিহার উদ্যোগ মিশন’ ঘোষণা করেন, যাতে প্রতি জেলায় একটা করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব গড়া হবে। “আমরা চাই বিহারের লিচি চীনে যাক, মধুবনীর পেইন্টিং আমেরিকায় বিক্রি হোক।

Advertisements

কিন্তু তার জন্য দরকার সঠিক নীতি, না হলে সব ‘মেক ইন চায়না’ হয়ে যাবে,” বলেন রাহুল।এই বক্তব্যের পর বিজেপি পাল্টা আক্রমণ করেছে। বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী বলেন, “রাহুল গান্ধী স্বপ্নের দুনিয়ায় বাস করেন।

নোটবন্দি কালো টাকা রুখেছে, জিএসটি অর্থনীতিকে সংগঠিত করেছে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র ফলে আজ ভারত থেকে রফতানি বেড়েছে। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্যের জন্য দরকার, কিন্তু আমরা পিএলআই স্কিম দিয়ে দেশীয় উৎপাদন বাড়াচ্ছি।

বিহারে ডবল ইঞ্জিন সরকার কারখানা গড়ছে, রাহুলজি শুধু সমালোচনা করেন।” বিজেপির দাবি, বিহারে ২০১৪-এর পর ১৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ এসেছে, নতুন এক্সপ্রেসওয়ে, বিমানবন্দর সবই উন্নয়নের প্রমাণ। কিন্তু রাহুলের কথায় সত্যি কতটা? অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নোটবন্দির ধাক্কায় এমএসএমই সেক্টরে ৩৫ শতাংশ চাকরি হারিয়েছে। জিএসটির জটিলতায় ছোট ব্যবসায়ীরা এখনও হিসাব রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন।

চীন থেকে আমদানি ২০১৬-এর ৬১ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৪-এ ১০১ বিলিয়ন হয়েছে। অন্যদিকে, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র সাফল্যও আছে মোবাইল উৎপাদনে ভারত দ্বিতীয় বৃহত্তম, কিন্তু ছোট শিল্পের অংশ কম। বিহারে বেকারত্ব ১৩ শতাংশের উপর, যা জাতীয় গড়ের দ্বিগুণ। রাহুলের ‘মেক ইন বিহার’ যদি বাস্তবে রূপ নেয়, তাহলে হয়তো স্থানীয় যুবকদের জন্য আশার আলো জ্বলবে।