পটনা: বিহারের রাজনৈতিক ময়দানে নতুন বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছেন জনপরামর্শক থেকে রাজনীতিক হয়েছেন প্রশান্ত কিশোর। এবার তাকে নিয়ে “রাজনৈতিক ব্যবসায়িক মডেল”–এর অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। প্রাক্তন নির্বাচনী কৌশলবিদ এবং বর্তমানে “জনসুরাজ পার্টি”র প্রতিষ্ঠাতা কিশোর সম্প্রতি জানিয়েছেন গত ২০ বছরে তিনি প্রায় ₹২৪১ কোটি আয় করেছেন, এবং এর মধ্যে ৯০ শতাংশ বা প্রায় ₹২১৭ কোটি জনকল্যাণের লক্ষ্যে দান করবেন।
যদিও এই ঘোষণা ঘিরেই তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক কারণ একই সময়ে জনসুরাজ পার্টির পক্ষ থেকে প্রতি বিহারবাসীকে দলকে ₹১০০০ করে আর্থিক সহায়তার আহ্বান জানানো হয়েছে। দল দাবি করছে, নতুন রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি করতে এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে জনগণের অর্থই সবচেয়ে নিরাপদ উৎস কোনও কর্পোরেট বা শক্তিশালী লবির উপর নির্ভর করা যাবে না।
স্বদেশী প্রচারে দেশজুড়ে ‘স্বদেশী সংকল্প রথ যাত্রা’ শুরু করতে চলেছে CAIT
কিন্তু বিরোধীরা ভিন্ন সুরে। তাদের বক্তব্য উদার দানের ঘোষণা দিয়ে আর্থিক সহায়তা আহ্বান করা “রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধির ছদ্মবেশে তহবিল সংগ্রহ।” সামাজিক মাধ্যমে ইতিমধ্যে প্রশান্ত কিশোরের বিরুদ্ধে “রাজনৈতিক ব্যবসা” চালানোর অভিযোগ ছড়িয়ে পড়েছে। সমালোচকেরা বলছেন “একদিকে শত কোটি টাকা দান, অন্যদিকে জনগণের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ এই দুই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য একসঙ্গে মিলছে না।”
অন্যদিকে কিশোরের সমর্থকদের যুক্তি “জনগণের টাকা দিয়ে জনগণের রাজনীতি”। তাঁদের দাবি, কর্পোরেট বা শিল্পগোষ্ঠীর অনুদানে দল চললে পরে রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। তাই জনগণের আর্থিক অংশগ্রহণই গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখবে। প্রতিটি বিহারি যদি ₹১০০০ দেয়, তাহলে “বিহারের জন্য বিহারবাসীর তহবিল তৈরি করা সম্ভব” এমনটাই মত জনসুরাজ শিবিরের।
বিজেপি নেতৃত্ব অভিযোগ করেছে, ভারতীয় রাজনীতিতে তহবিল সংগ্রহ নতুন বিষয় নয়, তবে এখানে “স্বয়ং জনগণের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ আর্থিক অংশগ্রহণ” মডেলই বিতর্কের মূল জায়গা। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, কিশোরের প্রচারণা কৌশল সবসময়ই প্রচলিত ব্যবস্থার বাইরে, এবং তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রেও একই ছবি দেখা যাচ্ছে। তাঁরা দেখছেন বিহারের রাজনীতিতে প্রচলিত দল বনাম নতুন রাজনৈতিক মডেলের সংঘাত ক্রমে তীব্র হচ্ছে।
তবে জনমতে এই উদ্যোগ মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকেই বলছেন সাধারণ মানুষ যদি নিজের রাজনীতিকে নিজের অর্থে গড়ে, তাহলে নেতৃত্ব এবং জনগণের দূরত্ব কমে। আবার অনেকেই আশঙ্কা দেখাচ্ছেন বিহারের গরিব ও শ্রমজীবী মানুষের কাছ থেকে আর্থিক সংগ্রহ নৈতিকভাবে সংবেদনশীল, যেখানে প্রয়োজন বরং সরকারি সেবা ও আর্থিক সহায়তা।
রাজনৈতিক সমীকরণও স্পষ্ট বিহারে তৃতীয় শক্তি হিসেবে জনসুরাজ পার্টির উত্থান অনেক দলের জন্য অস্বস্তিকর। তাই এই আর্থিক মডেল নিয়ে বিরোধ বাড়বে এটা নিশ্চিত। এর পাশাপাশি আরেকটি প্রশ্নও সামনে আসছে রাজনীতি কি অপরিহার্যভাবে দান–নির্ভর হবে, না জনঅংশগ্রহণ নির্ভর?
ভবিষ্যত বলবে কিশোরের পরিকল্পনা বিহারের রাজনীতিকে নতুন কাঠামো দেবে, নাকি এটি জনমতের পরীক্ষায় ব্যর্থ হবে। এখন যা স্পষ্ট বিহারের রাজনৈতিক লড়াই আর শুধু ভোটে সীমাবদ্ধ নয়, বরং রাজনৈতিক অর্থনীতি অর্থ কীভাবে আসছে, এবং কোথায় খরচ হচ্ছে সেটাই নতুন কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে।
