ত্রিপুরা: উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজনীতিতে নতুন মোড়। ত্রিপুরার রাজপরিবারের সদস্য এবং TIPRA মথা পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতি প্রদ্যোত বিক্রম মাণিক্য দেববর্মা ফের শিরোনামে। এনডিএর সঙ্গে সম্ভাব্য জোট নিয়ে যখন জল্পনা চরমে, তখনই মঙ্গলবার এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করলেন প্রদ্যোত। তিনি বলেন, “আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি। আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে এই কমিটি আমাদের মূল নীতি, সংবিধান, পতাকা এবং দলের নাম নির্ধারণ করবে।”
রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে এই ঘোষণাকে ঘিরে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। কারণ প্রদ্যোতের TIPRA মথা এতদিন ‘Greater Tipraland’-এর দাবিকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে নিজেদের জায়গা তৈরি করেছিল। তবে এনডিএর সঙ্গে আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক সমীকরণে বড় পরিবর্তন এসেছে। প্রদ্যোতের এই বক্তব্যে ইঙ্গিত মিলছে যে, দলের সংগঠন এবং আদর্শিক কাঠামো নতুন রূপ নিতে চলেছে।
দুয়ারে নির্বাচন! তার আগেই নয়া মাস্টার স্ট্রোকে বাউন্ডারি তেজস্বীর
সূত্রের খবর, TIPRA মথা ইতিমধ্যেই বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা নিজেও এই জোটের বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে প্রদ্যোত দেববর্মা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, “আমরা কোনও দলের শর্তে নয়, বরং নিজেদের মর্যাদা এবং অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে যাচ্ছি। জোট মানে আত্মসমর্পণ নয়, বরং যৌথভাবে কাজ করার অঙ্গীকার।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, TIPRA মথা ও এনডিএর সম্ভাব্য জোট আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বর্তমানে ত্রিপুরার পাহাড়ি এলাকাগুলিতে TIPRA মথার প্রভাব যথেষ্ট দৃঢ়। সেই ভোটব্যাঙ্ক যদি বিজেপির সঙ্গে যুক্ত হয়, তাহলে বিরোধী দলগুলির জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
তবে দলের অভ্যন্তরে কিছু অংশ এই জোট নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। তাদের মতে, এনডিএর সঙ্গে জোট মানে দলের মূল ‘Greater Tipraland’-এর দাবি থেকে সরে আসা। প্রদ্যোত অবশ্য এই যুক্তি উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, “আমরা কোনওদিনও আমাদের স্বপ্ন থেকে সরে আসিনি। কিন্তু বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। মানুষকে উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পরিচয়ের নিশ্চয়তা দিতে হবে।”
আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে TIPRA মথার কমিটি যে সিদ্ধান্ত নেবে, তা শুধু দলের ভবিষ্যৎ নয়, রাজ্যের রাজনীতির দিকনির্দেশও নির্ধারণ করবে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, যদি এই কমিটি নতুন পতাকা ও সংবিধানের মাধ্যমে দলকে পুনর্গঠনের পথে এগিয়ে দেয়, তাহলে TIPRA মথা শুধু একটি আঞ্চলিক শক্তিই নয়, উত্তর-পূর্ব রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ মুখ হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করতে পারে।
রাজ্যের সাধারণ মানুষও এই নতুন পদক্ষেপকে কৌতূহলের সঙ্গে দেখছেন। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা চাই প্রদ্যোত বাবু আমাদের স্বার্থে কথা বলুন, সেটা তিনি বিজেপির সঙ্গে থাকুন বা আলাদাভাবে।”


