রাজনৈতিক ডোনেশনের নামে কালো টাকা সাদা! বিপাকে ৩৬ দল

political-donation-scam-india-income-tax-36-fake-parties

নয়াদিল্লি: ভারতের আয়কর বিভাগের একটি দেশব্যাপী তদন্তে রাজনৈতিক দানের নামে চলা এক বিশালকায় জালিয়াতির পর্দা ফাঁস হয়েছে। গত তিন বছরে ৫,৫০০ কোটি টাকারও বেশি নকল দানের মাধ্যমে সরকারের কর প্রতি হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রে জড়িত ৩৬টি ছদ্ম রাজনৈতিক দল এবং ১.৬ লক্ষেরও বেশি সন্দেহজনক দাতার নাম উঠে এসেছে তদন্তের আলোয়।

Advertisements

অর্থগুলোকে রাউন্ড-ট্রিপিংয়ের মাধ্যমে দাতাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হতো, যাতে তারা ভুয়া কর ছাড় দাবি করতে পারে। এর ফলে অন্তত ৪,৪০০ কোটি টাকার নকল দাবি শনাক্ত হয়েছে। এই ঘটনা রাজনৈতিক অর্থায়নের অন্ধকার দিকটিকে নতুন করে আলোকিত করেছে, যা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

   

পুরো ভারত সন্ত্রাসমুক্ত, কাশ্মীরই একমাত্র ব্যতিক্রম, দাবি ডোভালের

আয়কর বিভাগের তদন্ত শুরু হয়েছে রেজিস্টার্ড আনরেকগনাইজড পলিটিক্যাল পার্টিজ (রাপিপি) নামক ছোটখাটো দলগুলির উপর নজর রেখে। এই দলগুলি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হলেও কোনো নির্বাচনে প্রার্থী দাঁড়ায় না, কিন্তু দান গ্রহণ করে কর ছাড়ের সুযোগ করে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এই ৩৬টি দলের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি—প্রধানত বেতনভোগী করদাতা—চেক বা ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে দান করতেন।

কিন্তু এই অর্থ দলের কাছে থাকত না; বরং কমিশন কেটে টাকা নগদে ফিরিয়ে দেওয়া হতো। এই প্রক্রিয়ায় ১-৩ শতাংশ কমিশন হিসেবে দলগুলি লাভবান হতো, আর দাতারা আয়কর আইনের ধারা ৮০জিজিসি-এর অধীনে ১০০ শতাংশ ছাড় পেয়ে যেতেন। একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “এটি একটি পরিষ্কার অর্থ পাচারের চক্র। কালো টাকা সাদা করে তোলা হয়েছে রাজনৈতিক দানের আড়ালে।”

Advertisements

তদন্তে দেখা গেছে, অনেক দাতা এমন দলগুলিতে দান করেছেন যারা তাদের নির্বাচনী এলাকায় কোনো প্রার্থী দাঁড়ায়নি, যা সন্দেহজনক।এই জালিয়াতির পরিধি বিশাল। গত তিন বছরে (২০২২-২৫) এই ছদ্ম দলগুলি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আরটিজিএস, নেফট এবং আইএমপিএসের মাধ্যমে কয়েকশো কোটি টাকা গ্রহণ করেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনে রিপোর্ট দেওয়ার বাধ্যবাধকতা পালন না করেই তারা দান শুরু করেছে।

ছত্রপতি সম্ভাজীনগর, জয়পুরসহ দেশের বিভিন্ন শহরে আয়কর দলের হানা চালিয়ে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি অজ্ঞাত দলে ৫০০ কোটি টাকার নকল দানের প্রমাণ পাওয়া গেছে, যেখানে কমিশন কেটে টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।

এর ফলে সরকারের রাজস্বে বিপুল ক্ষতি হয়েছে। তদন্তে জড়িত হয়েছে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টরা, যারা এই লেনদেনগুলি সাজিয়েছে। বিভাগটি ইতিমধ্যে ৯,০০০-এর বেশি দাতাকে নোটিশ পাঠিয়েছে, যাতে তারা তাদের দানের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করুন। অনেকে ইতিমধ্যে ভুল দাবি প্রত্যাহার করে অতিরিক্ত কর পরিশোধ করেছেন।