হায়দরাবাদ: দেশে অযোধ্যায় রাম মন্দির এবং বাবরি মসজিদকে কেন্দ্র করে যখন রাজনৈতিক উত্তাপ চরমে, ঠিক (Owaisi on Ram Temple and Babri demolition)সেই সময়ই বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM) প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। এক জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করেন।
ওয়েইসির দাবি, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রাম মন্দির নির্মাণে ৫০০ বছরের ক্ষত সেরে উঠছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টই তো বলেছে, কোনও প্রমাণ নেই যে কোনও মন্দির ভেঙে মসজিদ গড়া হয়েছিল। তাহলে এই ৫০০ বছরের ক্ষত কোথায়?”
রাশিয়া ভারতকে যে কালিবর-পিএল ক্ষেপণাস্ত্র দিতে চায়, তা কী?
ওয়েইসির প্রশ্নে নতুন করে বিতর্কের আবহ তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, “ক্ষত যদি থেকেই থাকে, তা হল ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরের ক্ষত। সেই দিনই বাবরি মসজিদকে ‘শহীদ’ করা হয়। শুধু মসজিদ নয়, সেই দিন ভারতের সংবিধান, আইনের শাসন সবকিছুকেই আঘাত করা হয়েছিল।” তাঁর কথায় স্পষ্ট ক্ষোভ, “যে দেশ গান্ধীজি হত্যা, ১৯৮৪–র শিখ গণহত্যা এবং বাবরি ধ্বংসের স্মৃতি বহন করে, সেখানে এই ঘটনাগুলিই আমাদের ‘ব্ল্যাক ডে’।”
ওয়েইসি আরও এক বড় অভিযোগ তোলেন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের লেখক বিচারপতিকে কেন্দ্র করে। তিনি বলেন, “অবসর নেওয়ার পরে বিচারপতি নিজেই বলেছেন মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরি করা ভুল ছিল। কিন্তু রায়ে তো লেখা এর কোনও প্রমাণ নেই। আপনি বিচারপতি, আপনি রায় লিখেছেন। তাহলে আদালতে একটি কথা, আর অবসরে গিয়ে অন্য কথা কেন?”
ওয়েইসির বক্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে তীব্র চর্চা শুরু হয়েছে। তাঁর ভাষণে ইতিহাস, আদালতের রায় এবং রাজনৈতিক বয়ান সবকিছুই মিশেছে। AIMIM নেতার বক্তব্যের মূল সুর দেশের আইন ও সংবিধানের ওপর আঘাতের প্রসঙ্গ। “৬ ডিসেম্বর শুধু একটি স্থাপত্য ভেঙে পড়ার দিন নয়,” বলেন তিনি। “এটি ছিল আইন-শৃঙ্খলার মৃত্যুর দিন।”
জনসভায় থাকা মানুষজনও ওয়েইসির বক্তব্যে আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠেন। বক্তৃতার সময় তিনি বারবার স্মরণ করিয়ে দেন ভারতে ধর্মীয় সহাবস্থানের ঐতিহাসিক গুরুত্ব। তাঁর কথায়, “একটি মন্দির বা একটি মসজিদ নিয়ে লড়াই নয়, দেশের আত্মাকে রক্ষা করা জরুরি। যে দেশের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ন্যায়-বিচার ও সমতার ওপর, সেখানে ধর্মীয় স্থাপনাকে কেন্দ্র করে বিভাজনকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়।”
ওয়েইসির এই সপ্রতিভ ও আক্রমণাত্মক ভাষণ অবশ্যই দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। রাম মন্দিরকে কেন্দ্র করে যখন সরকার এবং শাসকদলের নেতৃত্ব বারবার ‘ঐতিহাসিক ন্যায়বিচারের পুনরুদ্ধার’ দাবি করছে, ঠিক তখনই AIMIM প্রধানের এই বক্তব্য কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থানকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ওয়েইসির এই মন্তব্য একদিকে যেমন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে, অন্যদিকে শাসকদলকে প্রতিরক্ষায় নামতে বাধ্য করতে পারে। তাঁর বক্তব্যে একটি স্পষ্ট বার্তা বাবরি মসজিদ ধ্বংস ভারতের গণতন্ত্রের অন্যতম কালো অধ্যায়, আর সেই স্মৃতি আজও কোনওভাবেই মুছে যায়নি। জনসভা শেষে ওয়েইসি তাঁর বক্তব্যের সারমর্ম স্পষ্ট করে বলেন “আইনই দেশের আসল শক্তি, ধর্ম নয়। যে কোনও অত্যাচার বা অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে একটা দল বা একটা ধর্মের জন্য নয়, দেশের জন্য।”

