সীতামাড়হি জেলার রঘুনাথপুর বিধানসভা কেন্দ্রটি এখন রাজনৈতিক ঝড়ের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। আগামীকাল, ৬ নভেম্বর, এখানে বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোটগ্রহণ হবে। আর এই কেন্দ্র থেকে রাস্ত্রীয় জনতা দল (আরজেডি)-এর টিকিটে লড়ছেন মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনের ছেলে ওসামা শাহাব। শাহাবুদ্দিন, সেই বিখ্যাত ‘বাহুবলী’ নেতা, যিনি সীওয়ানের রাজত্ব চালিয়েছিলেন অজস্র অপরাধের ছায়ায়।
এর মধ্যেই এসে পড়লেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। সোমবার রঘুনাথপুরে একটা জনসভায় তিনি বললেন, “রঘুনাথপুরে আসার আগে আমি ভেবেছিলাম, এখানে দেখব প্রভু রাম, লক্ষ্মণ আর মা সীতাকে। কিন্তু শুনলাম, এখানে অনেক রাম-লক্ষ্মণ-সীতা আছে, আর একটা ওসামাও আছে।
রাত পোহালেই EVM সামনে বিহারবাসী, ওপিনিয়ন পেলে উলাট-পুরাণের আভাস!
এই ওসামা ছোট লাদেনের মতোই কাজ করে, ছোট স্কেলে। তার বাবা শাহাবুদ্দিন হত্যার রেকর্ড গড়েছিলেন, ছেলে খেলার খেলনার বদলে একে-৪৭ নিয়ে বড় হয়েছে। যদি এমন ওসামা জিতে যায়, তাহলে হিন্দুদের পরাজয় হবে। ১৪ নভেম্বর ফলাফল দেখব কামাখ্যা মন্দিরের দরজায় বসে। তোমরা ওসামাকে হারাবে, যেমন তার মাকে হারিয়েছিলে।”
কিন্তু এবারের যুদ্ধ শুধু ডাকাতি আর বাহুবলীর নয়, এতে মিশে গেছে ধর্মীয় রঙ, বংশের লিগ্যাসি আর নতুন প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা। এর মাঝে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা তার এক বক্তব্যে আগুন ঢেলে দিয়েছেন, যা রাজনৈতিক বিতর্কের নতুন মাত্রা যোগ করেছে।রঘুনাথপুরের রাজনীতির ইতিহাস যেন একটা অন্ধকার উপন্যাসের মতো। এই কেন্দ্রটি সীওয়ান জেলার অংশ, যেখানে শাহাবুদ্দিনের নাম এখনও ভয় আর সম্মানের মিশ্রণ তৈরি করে।
১৯৯০-এর দশকে আরজেডি যুব উইং থেকে রাজনীতিতে পা রাখেন শাহাবুদ্দিন। তিনি চারবার সীওয়ান থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন, কিন্তু তার পিছনে ছিল অসংখ্য হত্যা, অপহরণ আর দমনের গল্প। ২০০৪ সালে দ্বিগুণ হত্যার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেলে যান তিনি।
২০২১ সালে কোভিডে মারা যান তিহার জেলে বন্দি অবস্থায়। তার মৃত্যুর পর পরিবারের রাজনৈতিক যাত্রা থমকে যায়। স্ত্রী হিনা শাহাব চারবার সীওয়ান লোকসভা কেন্দ্র থেকে লড়েন তিনবার আরজেডি টিকিটে, একবার স্বতন্ত্র কিন্তু জয়ী হননি।
২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তারা ভালো ভোট পান, কিন্তু জেডিইউ-এর বিজয়লক্ষ্মী কুশওয়াহার কাছে হেরে যান।এবার আরজেডি সিদ্ধান্ত নিয়েছে নতুন প্রজন্মকে সামনে আনার। ৩১ বছরের ওসামা শাহাব, লন্ডন থেকে আইন পড়া যুবক, তার বাবার লিগ্যাসি নিয়ে রঘুনাথপুর থেকে লড়ছেন। তার শপথপত্রে দুটো অপরাধমূলক মামলার উল্লেখ আছে অবৈধ প্রবেশ আর দাঙ্গা সংক্রান্ত। তার সম্পত্তি ২.৩১ কোটি টাকার বেশি, স্ত্রীর ৫.৭ কোটি। সামাজিক কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন তিনি।
কিন্তু রঘুনাথপুরে তার বাবার ছায়া এখনও গাঢ়। এই কেন্দ্রে মুসলিম ভোটার প্রায় ৬৮ হাজার, যাদব ২৮ হাজার, রাজপুত ৩১ হাজার আর অনগ্রসর সম্প্রদায় ৩৪ হাজার। আরজেডির মুসলিম-যাদব (এমওয়াই) সমীকরণ এখানে শক্তিশালী। ২০১৫ এবং ২০২০-এ আরজেডির হরিশঙ্কর যাদব এখানে জিতেছেন, মার্জিন যথাক্রমে ১০,৬২২ আর ১৭,৯৬৫ ভোট। এবার হরিশঙ্কর স্বেচ্ছায় সিট ছেড়ে দিয়েছেন ওসামাকে।
আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব বলেছেন, “ওসামা নতুন শক্তি, যে সীওয়ানের উন্নয়নের স্বপ্ন দেখে।”কিন্তু এই যুদ্ধ সহজ নয়। এনডিএ-এর জেডিইউ প্রার্থী বিবেক কুমার সিংহ, যিনি এখানে ‘কলমের যোদ্ধা’ হিসেবে পরিচিত, বলছেন, “এটা বন্দুক বনাম কলমের লড়াই।” জান সুরাজ পার্টির রাহুল কীর্তি তৃতীয় দাবিদার। বিজেপি-জেডিইউ জোট এখানে শাহাবুদ্দিনের অতীতকে অস্ত্র করে লড়ছে। তারা বলছে, আরজেডি ‘জঙ্গল রাজ’ ফিরিয়ে আনতে চায়।


