কলকাতা: জন্ম নিবন্ধন বা বার্থ রেজিস্ট্রেশন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দায়িত্ব। নতুন জন্ম হয়ে নবজাতকদের তালিকা সাহায্য করে জনগণনায়। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে সাম্প্রতিক কিছু বছরে উত্তর দিনাজপুরের মত সীমান্তবর্তী জেলায় এই জন্ম নিবন্ধনে বিপুল দেরি করছে বর্তমান তৃণমূল সরকার। অভিযোগ করে এবং সঙ্গে নথি ভিত্তিক প্রমান দিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন নথি অনুযায়ী, ২০২৪ সালে উত্তর দিনাজপুর জেলায় মোট ১২,৩৯৩টি দেরিতে জন্ম নিবন্ধনের ঘটনা ঘটেছে। আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য, ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত এই সংখ্যা আরও বেড়ে গেছে যা স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের কার্যকারিতার ওপর বড় প্রশ্ন তুলছে।
Memo No. CMOH/UD/Esstt/2205.S (Dated: 14.10.2025) অনুযায়ী — ২০২৪ সালে উত্তর দিনাজপুরে ১২,৩৯৩টি দেরিতে জন্মনিবন্ধন হয়েছে!
আর ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে!সীমান্তবর্তী জেলায় এত বিপুল দেরিতে জন্মনিবন্ধন মানে কী?
এটাই সেই কাগজ, যার আড়ালে তৈরি হচ্ছে ভুয়ো… pic.twitter.com/OafsOUDSt8— Samik Bhattacharya (@SamikBJP) October 24, 2025
বিজেপির অভিযোগ, সীমান্তবর্তী এই জেলায় জন্ম নিবন্ধনের নামে আসলে তৈরি হচ্ছে ‘ভুয়ো নাগরিকদের তালিকা’। শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “এই জন্মনিবন্ধনগুলো শুধুমাত্র প্রশাসনিক দেরি নয়, এর আড়ালে সক্রিয় চক্র কাজ করছে, যারা বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের নাগরিকত্বের সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “যে রাজ্যে প্রশাসন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া কিছু নড়ে না, সেখানে এত বিপুল দেরিতে নিবন্ধন মানে সরকারের অজান্তে নয় সরকারের ছত্রছায়ায় এই কাজ চলছে। জন্ম নিবন্ধনের সার্টিফিকেটই তো নাগরিকত্ব প্রমাণের মূল নথি সেটি যদি কারচুপি হয়, তাহলে বাংলার নিরাপত্তা বিপন্ন।”
এই অভিযোগকে আরও দৃঢ় করেছেন প্রাক্তন সাংসদ ড. কিরীটি সোমাইয়া, যিনি একটি RTI আবেদন-এর মাধ্যমে এই তথ্য প্রকাশ্যে এনেছেন। তাঁর বক্তব্য, “উত্তর দিনাজপুরের প্রশাসনিক রিপোর্টেই প্রমাণ আছে হাজার হাজার জন্ম নিবন্ধন বছরখানেক পরে হয়েছে, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে একাধিক নথি একই তারিখে তৈরি হয়েছে।” ড. সোমাইয়ার মন্তব্য, “এটা কেবল দেরিতে রেজিস্ট্রেশনের বিষয় নয়, এটা এক ধরনের জনসংখ্যা-কারচুপি। তৃণমূল আমলে বাংলার সীমান্তে চলছে ভুয়ো নাগরিক তৈরির কারখানা।”
বিজেপির নেতৃত্ব এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে নতুন আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলীয় মুখপাত্ররা জানিয়েছেন, এই ঘটনা প্রমাণ করে CAA বাস্তবায়ন না হলে প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষিত করা সম্ভব নয়। শমীক বলেন, “CAA বিরোধিতা করে তৃণমূল আসলে অনুপ্রবেশকারীদের রক্ষা করছে। আজ এই সরকারি তথ্যই আমাদের দাবি প্রমাণ করছে বাংলার সীমান্তে চুপিচুপি চলছে ভুয়ো নাগরিক তৈরি। প্রশাসনের হাতেই সেই ছাপা মেশিন।”
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে অনুপ্রবেশ ও নাগরিক নথির প্রশ্ন আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বড় ইস্যু হয়ে উঠতে পারে। বিজেপি এই ইস্যুতে সরাসরি সরকারের ‘সাইলেন্স’কে আক্রমণ করেছে, আর তৃণমূল তা “গুজব ও বিভ্রান্তি” বলেই উড়িয়ে দিচ্ছে।
শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্যে স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা রয়েছে “বাংলার মানুষ জানুক, জন্ম নিবন্ধনের কাগজ যদি কারচুপি হয়, তাহলে নাগরিকত্বও ভুয়ো হতে পারে। আমরা চাই, প্রতিটি জন্ম নথি স্বচ্ছ হোক, তদন্ত হোক, আর দোষীদের জবাবদিহি হোক।”


