কলকাতা: বাংলার রাজনীতিতে ফের এক বড় পালাবদল। মুর্শিদাবাদের রাজনীতি ফের সরগরম বিজেপি নেতা নির্মল ঘোষের দলবদল ঘিরে। এক সময় বিজেপির সক্রিয় মুখ হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। কিন্তু এবার তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্মল ঘোষই ছিলেন তৃণমূল কাউন্সিলর সত্যজিৎ বিশ্বাস হত্যাকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত।
২০১৯ সালে নদিয়ার হানস্পুকুরে তৃণমূল কাউন্সিলর সত্যজিৎ বিশ্বাসকে গুলি করে খুন করা হয়। এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব সরাসরি বিজেপির দিকে আঙুল তোলে। তদন্তের পর নাম জড়ায় বিজেপি নেতা নির্মল ঘোষসহ আরও পাঁচজনের। নির্মল ঘোষকে গ্রেফতারও করা হয় এবং কিছু সময়ের জন্য জেলে কাটান তিনি। তবে আদালতে প্রমাণের অভাবে পরবর্তীকালে তিনি বেকসুর খালাস পান।
এরপর দীর্ঘ সময় বিজেপির সঙ্গেই ছিলেন তিনি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়তে থাকে। সংগঠনে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা কমে যায়, জেলা স্তরে গুরুত্ব হারান। অভিযোগ, দলের ভেতরেই তাঁকে উপেক্ষা করা হচ্ছিল। শেষমেশ সেই মনঃক্ষুণ্ণ নেতা এখন শাসকদলের পতাকা হাতে তুলে নিলেন।
শুক্রবার এক জাঁকজমক অনুষ্ঠানে নির্মল ঘোষ আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি এবং বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা। তাঁকে দলীয় পতাকা তুলে দেন জেলা নেতৃত্ব। নির্মল ঘোষের দাবি, “আমি সব সময় মানুষের পাশে থেকেছি। বিজেপি আমাকে ব্যবহার করে ফেলে দিয়েছে। এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই রাজ্যের উন্নয়ন সম্ভব। তাই আমি তৃণমূলে যোগ দিলাম।”
তবে বিজেপি নেতৃত্ব এই পদক্ষেপকে “স্বার্থসিদ্ধির রাজনীতি” বলে কটাক্ষ করেছে। তাঁদের বক্তব্য, “খুনের মামলায় নাম জড়ানো এক ব্যক্তি এখন তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন — এটা রাজ্যের রাজনীতির নৈতিক অবক্ষয়ের স্পষ্ট উদাহরণ।” অন্যদিকে তৃণমূলের পাল্টা দাবি, “নির্মল ঘোষ এখন নির্দোষ প্রমাণিত। আদালত তাঁকে খালাস দিয়েছে।
তিনি যদি মানুষের কাজ করতে চান, তৃণমূল সর্বদা সাদরে গ্রহণ করবে।” এই ঘটনাকে ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোর চর্চা। কেউ বলছেন, তৃণমূল আবারও পুরনো শত্রুকে নিজেদের দলে টানল রাজনৈতিক হিসেব কষে। কেউ বলছেন, বিজেপির সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়ছে, তাই নেতাদের একে একে দল ছাড়ার মিছিল শুরু হয়েছে।
তৃণমূল সূত্রে খবর, নির্মল ঘোষকে জেলা স্তরে কিছু দায়িত্বও দেওয়া হতে পারে শিগগিরই। তাঁর জনপ্রিয়তা এবং স্থানীয় সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ কাজে লাগাতে চাইছে তৃণমূল। অন্যদিকে বিজেপি শিবিরে এই দলত্যাগ যে এক বড় ধাক্কা, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা কেবল দলবদল নয়, বরং রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন। যেখানে নৈতিকতার চেয়ে ক্ষমতার সমীকরণই এখন বড় হয়ে উঠছে।